গবেষণা প্রস্তাবনা (গণমাধ্যম গবেষণা)

গবেষণা প্রস্তাবনার নমুনা 

শিরোনামঃ বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের মাত্রা ও ধরণ।


সূচিপত্র

অধ্যায় ১ ভূমিকা

১.১ গবেষণার যৌক্তিকতা

১.২ গবেষণার উদ্দেশ্য

১.৩ গবেষণা প্রশ্ন

১.৪ প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞা

অধ্যায় ২ প্রসাঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা

২.১ তাত্ত্বিক কাঠামো

অধ্যায় ৩ গবেষণা পদ্ধতি

৩.১ আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

৩.২ নমুনাসমগ্রক ও নমুনায়ন

অধ্যায় ৪ উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ

অধ্যায় ৫ সম্ভাব্য সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা

অধ্যায় ৬ সময়সূচি

অধ্যায় ৭ বাজেট

 

অধ্যায় ১: ভূমিকা

“জনগন কতটা জানবে কতটা শুনবে, তা একসময় ঠিক করে দিতেন রাজা ও পুরোহিতগণ। এখন নির্ধারণ করে গণমাধ্যম। গণমাধ্যম যা সম্প্রচার করে না, জগতে তা সংগঠিত হয় না। গণমাধ্যম এখন শুধু বাস্তবতার প্রতিফলন নয়, বরং বাস্তবতার উৎস” (হায়দার ও সামিন,২০১৪)। 

বর্তমান সময়ে গণমাধ্যমগুলো সামাজিক বাস্তবতা রেপ্রিজেন্টেশনের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপায়। চারপাশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদেরকে গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করতে হয়। একই বিষয়কে গণমাধ্যমগুলো ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করে। কোন ঘটনা একটি কিভাবে গণমাধ্যম উপস্থাপন করছে তা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে গণমাধ্যমের নীতি বোঝা যায়।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ (রবিবার) রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসে সোহাগী জাহান তনু (১৯) নামের এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় নি। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কালের ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। সেনানিবাসের মতো সংরক্ষিত এলাকাতে এমন ঘটনা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে আর নেই। তিনি স্থানীয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও কলেজ নাট্যদলের কর্মী ছিলেন।

যেকোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত, রহস্য, অপরাধ, অভিনবত্ব বড় সংবাদ (রহমান, ২০০৭)। সেই কারণে সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ স্বাভাবিক ভাবেই সব গণমাধ্যমকে আকৃষ্ট করেছে। সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংঘটন এই মৃত্যুর জন্য যে বা যারা দায়ী তাদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদমুখর হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলো মৃত্যুর সংবাদের পাশাপাশি বিচারের দাবিতে যেসব প্রতিবাদ, মানববন্ধন, আন্দোলন হয়েছে সেগুলোও গণমাধ্যম প্রকাশ করেছে। তবে মৃত্যুর সাথে সাথেই এই ঘটনা গণমাধ্যমে গুরুত্ব লাভ করে নি। মৃত্যুর পর কয়েক দিন পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ের কোন গণমাধ্যম এই সংবাদ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেনি, শুধুমাত্র কিছু অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে এই মৃত্যুর ঘটনা প্রচারিত হলে পরবর্তীতে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো এই সংবাদ প্রকাশে উদ্যোগী হয়।

তবে সব গণমাধ্যমে বিষয়টি সমান গুরুত্ব পায়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে সংবাদ বর্ণনা করেছে। কোন সংবাদপত্র যে বিষয়কে গুরুত্বসহকারে দেখিয়েছে, অন্য সংবাদপত্র তাকে কম গুরুত্ব দিয়ে দেখিয়েছে। ফলে বিভিন্ন মাধ্যমের অডিয়েন্সের অনুধাবনও ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে।

এই উপস্থাপনার প্রকৃত ধরণ কী, কেন এভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, গণমাধ্যম ভেদে এই উপস্থাপনার ধরণে ভিন্নতা ছিল কিনা, গণমাধ্যমের মতাদর্শ কিভাবে কাজ করেছে- তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে।

এই গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম গুলোতে সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, গণমাধ্যমভেদে উপস্থাপনার ধরণ ও মাত্রা ভিন্ন ছিল কিনা, উপস্থাপনায় মতাদর্শের প্রভাব ছিল কিনা-তা অনুসন্ধান করা হবে।

 

১.১ গবেষণার যৌক্তিকতা

সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক এই মৃত্যু কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে প্রায়শই নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ঘটে। তনু মৃত্যুর আগে নির্যাতিত হয়েছিল কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর পর প্রথম যে ময়না তদন্ত করা হয়েছিল সেখানে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে ২৯ মার্চ আদালতের নির্দেশে লাশ কবর থেকে তোলা হয় পুনরায় ময়না তদন্তের জন্য (উদ্দিন, ২০১৬)। ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মোট ১৮৪৭ নারী ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে এবং সহিংসতার শিকার হয়ে ৩০১ জন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে (বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা, ২০১৬)। ২০১৫ সালে জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে মোট ১৮৩ জন (বিচার বহির্ভূত হত্যা, ২০১৬)। বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো নারীর প্রতি সহিংসতার খবর বা বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড বা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কিভাবে সাড়া দেয় তা জানা প্রয়োজন।

গণমাধ্যম সকল বিষয় সমান গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে না। অনেক বিষয়ের মধ্য থেকে গণমাধ্যম তার আলোচ্য সূচি নির্বাচন করে। পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সামাজিক অবস্থা, ব্যাবসায়িক স্বার্থ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে গণমাধ্যম সিদ্ধান্ত নেয় কোন বিষয় তারা প্রচার করবে আর কোনটা করবে না।বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর মতো সামাজিক ইস্যুতে কিভাবে সাড়া দেয় তা জানা প্রয়োজন।

সুতরাং, গণমাধ্যম সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ কিভাবে প্রকাশ করেছে, ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে তা সামনে নিয়ে এসেছে, গণমাধ্যমভেদে এই আলোচনার ধরণ কেমন ছিল, গণমাধ্যমের মতাদর্শ কিভাবে প্রভাব ফেলেছে- এই বিষয়গুলো খুঁজে পেতে এই গবেষণা করা প্রয়োজন। 

এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কিভাবে সাড়া দিয়েছে তা জানতে পারলে অন্যান্য হত্যা ও সামাজিক ইস্যুতে গণমাধ্যম কিভাবে সাড়া দেয় তা ব্যাখ্যা করা সহজ হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের গণমাধ্যমের সরূপ বোঝার ক্ষেত্রে এই গবেষণাটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।

 

১.২ গবেষণার উদ্দেশ্য

বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ও এই হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সংবাদ উপস্থাপন হয়েছে নানা ভঙ্গিতে। যার ফলে, ভিন্ন ভিন্ন অর্থ উৎপাদন হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন অডিয়েন্সের উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। এই উপস্থাপনার নানা ভঙ্গি হয়তো সচেতন অডিয়েন্স লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ অডিয়েন্স তার সরূপ খুঁজে দেখেননি, কিংবা দেখার সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও গণমাধ্যমে তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর উপস্থাপন নিয়ে গবেষণা হয়নি। ফলে মূলধারার গণমাধ্যমে এই অস্বাভাবিক মৃত্যু কিভাবে উপস্থাপিত হয়েছে তা একটি কৌতূহলোদ্দীপক অনুসন্ধানক্ষেত্র হতে পারে। বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ও মৃত্যুর পর বিচারের দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছে তার উপস্থাপনার মাত্রা ও ধরণ কী ছিল তার অনুসন্ধান এই গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য।

গবেষণাটি যেসব উদ্দেশ্য সামনে রেখে পরিচালিত হবে সেগুলো হলোঃ

** বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ বিশ্লেষণ।

** বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ উপস্থাপনার ধরণে ভিন্নতা রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান ও তুলনা।

** বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ কি মাত্রায় উপস্থাপন করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ।

 

১.৩ গবেষণা প্রশ্ন

গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষণা প্রশ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষণা প্রশ্ন গবেষণার উদ্দেশ্যকে খুঁজে পেতে নির্দেশনা দেয়। নিম্ন লিখিত প্রশ্নের ভিত্তিতে গবেষণাটি পরিচালিত হবেঃ

** সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ কতটা প্রকাশ হয়েছে?

** এই ঘটনা নিয়ে কতগুলো লিড নিউজ হয়েছে?

** সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কি ধরনের সাংবাদিকতা (যেমন, অনুসন্ধানী, ব্যাখ্যামূলক, হলুদ ইত্যাদি) লক্ষ্য করা গেছে?

** গণমাধ্যম ভেদে সংবাদ প্রকাশে ভিন্নতা লক্ষ্য করা গেছে কিনা?

 

১.৪ প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞা

সোহাগী জাহান তনুঃ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস ২য় বর্ষের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী, যার লাশ গত ২০ মার্চ ২০১৬ কুমিল্লা সেনানিবাসে পাওয়া গেছে।

মূলধারার গণমাধ্যমঃ যেসব গণমাধ্যম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন পড়ে, দেখে, শোনে এবং সেইসব গণমাধ্যমে প্রাধান্যশীল ও প্রচলিত মতাদর্শ প্রতিফলিত হলে তাদের মূলধারার গণমাধ্যম বলে। এই গবেষণায় চারটি জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র মূলধারার গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হবে। পত্রিকা চারটি হলো প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, কালের কণ্ঠ ও নয়াদিগন্ত। এই পত্রিকাগুলোর জাতীয় পর্যায়ে যথেষ্ট মাত্রায় সার্কুলেশন ও গ্রহনযোগ্যতা আছে। এই পত্রিকা গুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ লেখেন, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে মতামত ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এই পত্রিকাগুলোর ভিন্ন মতাদর্শ আছে। এদের পাঠকদের মধ্যেও ভিন্নতা আছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই পত্রিকা গুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

অস্বাভাবিক মৃত্যুঃ অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কে Collins Dictionary তে বলা হয়েছে, “Deaths due to violence and the consequences of the injuries that result in death. This could be cases of homicide (murder or culpable homicide), suicide or accidents (including motor vehicle accidents). Consequences of injuries that may result in death include infections such as lung infections, blood clots to the lungs and tetanus or rabies after a dog bite.”

মাত্রা ও ধরনঃ মাত্রা বলতে কতটুকু সংবাদ প্রকাশ হয়েছে তা বোঝানো হয়েছে। ধরণ বলতে বোঝানো হয়েছে কি ধরনের সংবাদ (ব্যাখ্যামূলক, অনুসন্ধানী ইত্যাদি) প্রকাশিত হয়েছে।

 

অধ্যায় ২: প্রসাঙ্গিক সাহিত্য পর্যালোচনা

২০১১ সালে বলিউডে রাজ কুমার গুপ্ত “নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা” নামে একটি চলচিত্র নির্মাণ করেন। মুভিতে দেখা যায় জেসিকা লাল নামের একজন বার পরিচালিকার কাছে ড্রিংস চেয়ে না পেয়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেন মানিশ, যিনি একজন মন্ত্রীর ছেলে। এই হত্যাকাণ্ড ঘটে প্রায় ৩০০ জন হাই প্রোফাইল ব্যাক্তির সামনে। কিন্তু যখন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয় তখন বাধে বিপত্তি। যারা ওখানে উপস্থিত ছিলো তারা অস্বীকার করেন। সবাই বলতে থাকে তারা হত্যার আগেই সেখান থেকে ফিরে এসেছে।

মুভিতে দেখা যায় এই ঘটনার বিচার শুরু হলে আদালতে এসে অধিকাংশ সাক্ষী অসত্য সাক্ষ্য প্রদান করে। কারণ তাদেরকে ভয় দেখিয়ে বা টাকার বিনিময়ে আসামীপক্ষ হাত করে নিয়েছে। ফলে এই হত্যার সঠিক বিচার পাওয়া যায় না, দোষীরা আদালত থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। বিচারের মাধ্যমে যখন দোষীদের শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হয় না তখন একটি সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় ‘নো ওয়ান কিল্ড জেসিকা’। 

আদালত থেকে যখন দোষীরা মুক্তি পেয়ে যায় তখন গণমাধ্যম এই বিচারের বিভিন্ন দিক ও জেসিকা হত্যা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ শুরু করে। ফলে সাধারণ জনগন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে। গণমাধ্যমের প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ জনগন বুঝতে পারে এই বিচার সঠিক হয় নি। ফলে তারা জেসিকা হত্যার সঠিক বিচারের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই আন্দোলনের কারণে আদালত জেসিকা হত্যা মামলা পুনঃবিচারের ব্যাবস্থা করে। পুনঃবিচারের মাধ্যমে আদালত দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি প্রদান করে। এই চলচিত্রটি বাস্তব কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে (Webster, 2011)।

 

১৯৯৬ সালে রীনা সুলতানা হক “অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনঃ বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ” শিরোনামে একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্ন ধরণের সংবাদ কি পরিমাণ প্রকাশ হয়। এবং সংবাদপত্র ভেদে সংবাদ প্রকাশের হারের বিভিন্নতার কারণ বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি তার গবেষণায় পত্রিকাওয়ারী বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন একই সংবাদ সব পত্রিকায় সমান গুরুত্ব পায় না।

২০১৪ সালে “বাংলাদেশে হলুদ সাংবাদিকতাঃ প্রবণতা ও প্রকরণ” শিরোনামে একটি গবেষণায় শান্তনু চৌধুরী বাংলাদেশের সংবাদপত্রে হলুদ সংবাদ প্রকাশের ধরণ ও মাত্রা দেখিয়েছেন। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে কিভাবে একটি সংবাদ উপস্থাপনার জন্য হলুদ সংবাদে পরিণত হয়। কোন প্রেক্ষাপটে এবং কেন হলুদ সাংবাদিকতা ঘটে তাও এই গবেষণায় বর্ণনা করা হয়েছে। উল্লেখিত সাহিত্য পর্যালোচনা বর্তমান গবেষণা প্রস্তাবটির আলোকে গবেষণা সম্পাদনের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।

২০১৫ সালে বিবিসি বাংলা পরিচালিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে বাংলাদেশে গত দশ বছর ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এইসব নির্যাতনের বিচার হয় না। বিচারহীনতার কারণে প্রতি বছর নির্যাতনের সংখ্যা বাড়ছে। সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে গনমাধ্যম অনেক ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো এড়িয়ে যেতে চায়। গণমাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতনের সংবাদ সঠিকভাবে প্রকাশ না হওয়াতে এই সমস্যার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে উঠতে পারছে না।

“Women and Media: A Critical Introduction” শিরনামে এক সমীক্ষায় Carlon M. Byerly and Karen Ross দেখিয়েছেন কিভাবে গণমাধ্যমে নারী বিষয়ক সংবাদ কম উপস্থাপিত হয়। একই গবেষণায় আরও দেখা গেছে নারীদের কোন নেতিবাচক সংবাদ ইতিবাচক সংবাদের থেকে অনেক বেশি প্রাধান্য পায়। একই নেতিবাচক সংবাদে নারী ও পুরুষ উভয় থাকা সত্ত্বেও নারীকে বেশি উপস্থাপিত করা হয়। যদিও ইতিবাচক সংবাদের ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় না। 

উল্লেখিত পূর্বপাঠপর্যালোচনা বর্তমান গবেষণা প্রস্তাবটির আলোকে গবেষণা সম্পাদনের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। রীনা সুলতানা হকের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ধারণা তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের মাত্রা ও ধরণ বুঝতে সহায়তা করবে। 

 

Carlon M. Byerly and Karen Ross- এর গবেষণা এটা বুঝতে সাহায্য করবে যে গণমাধ্যম সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। বিকৃতভাবে উপস্থাপন বলতে বোঝানো হচ্ছে গণমাধ্যম পরোক্ষভাবে এমন কোন বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে কিনা, যে তনুর মৃত্যুর জন্য তিনি নিজেই দায়ী। কেন একটা মেয়ে রাতে বাহিরে যাবে এমন সংবাদ প্রকাশ করে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে কিনা? 

শান্তনু চৌধুরীর গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ধারণা থেকে বোঝা যাবে তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের নীতি কেমন ছিল। তারা এই ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছে কিনা তা বুজতে সাহায্য করবে শান্তনু চৌধুরীর গবেষণা।

২.১ তাত্ত্বিক কাঠামো

এই গবেষণাটি পরিচালিত হবে অধ্যাপক মাক্সওয়েল ম্যাককম্বস ও অধ্যাপক ডোনাল্ড শ- এর আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে।

আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব

ম্যাককম্বস ও শ ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের প্রায়োগিক পরীক্ষা চালান। আর এই পরীক্ষার মাধ্যমে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের একটি সুদৃঢ় কাঠামো দাড়িয়ে যায়।

এই তত্ত্বের মূল কথা হলো পাঠক-দর্শক-শ্রোতা (অডিয়েন্স) গণমাধ্যমে কোনো ইস্যুর প্রচার অনুযায়ী তাদের নিজেদের অনুধাবন সাজিয়ে নেয়। অর্থাৎ কোনো ইস্যু গণমাধ্যমে প্রাধান্য পেলে জনগনের চিন্তা ও আলোচনায় এর প্রাধান্য থাকবে বলে মনে করা যেতে পারে (Shaw & McCombs, 1977; উদ্ধৃত রহমান, ১৯৯৫)। এ তত্ত্বে আরও বলা হয়, মানুষ কোন বিষয়ে চিন্তা করবে, তা ঠিক করে দেয় গণমাধ্যম কিন্তু কি চিন্তা করবে তা বলে দেয় না।

 

আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ধাপঃ

গণমাধ্যমের আলোচ্যসূচি নির্ধারণের কাজটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে গণমাধ্যম কোনো ইস্যু বা বিষয় বেছে নেয়। জনগনের কি নিয়ে ভাবা উচিত, সে সম্পর্কে চিন্তিত করে তুলতে দ্বিতীয় পর্যায়ে গণমাধ্যম ওই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে প্রচার করে। এ পর্যায়ে গণমাধ্যম নিয়মিত ওই বিষয়ের উপর খবর বা মতামত প্রচার করতে থাকে। এভাবে গণমাধ্যমের নির্ধারণ করা আলোচ্যসূচি ধীরে ধীরে জনগনের আলোচ্যসূচিতে পরিণত হয়। ফলে গণমাধ্যমের আলোচ্যসূচি জনগনের কাছেও আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে (হায়দার ও সামিন,২০১৪)। 

আলোচ্যসূচি নির্ধারণ কৌশলঃ

আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকে। যথাঃ

দ্বার রক্ষণঃ গণমাধ্যমে দ্বার রক্ষণ বলতে আধেয় নিয়ন্ত্রনের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রতিদিন আমাদের চারপাশে অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু গণমাধ্যমে সব সংবাদ আসে না। অসংখ্য ঘটনার মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যেমনঃ দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়াদিগন্তে জামায়েতে ইসলামীর সাংগঠনিক টুকিটাকি সংবাদও প্রচারিত হয়। আবার দৈনিক প্রথমআলো, দৈনিক সংবাদ, একাত্তর টেলিভিশনে জামায়েতে ইসলামীর সাংগঠনিক টুকিটাকি সংবাদ আসে না। আবার বিটিভি’তে সরকারদলীয় সংবাদে ঠাঁসা। বিরোধীদলের সংবাদের ঠাই সেখানে হয় না। এগুলো হয় দ্বার রক্ষনের কারণে। দ্বার রক্ষনের মাধ্যমে গণমাধ্যম সংবাদ প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে। তবে সব সময় যে দ্বার রক্ষনের কাজটি গণমাধ্যম নিজে থেকে করে না নয় অনেক সময় বাহ্যিক উৎস থেকে চাপ আসার কারণে দ্বার রক্ষন করতে হয় (হায়দার ও সামিন,২০১৪)। 

 

মুখ্যকরণঃ গণমাধ্যমে কিছু সংবাদ বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। আর কিছু সংবাদ খুব সাদামাটাভাবে উপস্থাপিত হয়। অসংখ্য সংবাদের ভিড়ে ভিন্ন ভিন্ন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম কোনো ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে, আর কোনো কোনো ইস্যুকে কম গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করে। এভাবে গণমাধ্যম অডিয়েন্সকে বলে দেয়, কোন বিষয়টা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্রগুলো ব্যানার হেডলাইন বা শীর্ষ সংবাদ, বক্স, লাল কালি বা মোটা হরফের ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে কোন সংবাদ বা ইস্যুকে পাঠকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। অপরদিকে রেডিও টেলিভিশনে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, সংবাদের প্রথমদিকে, একাধিকবার প্রচার করে, অধিক সময় বরাদ্দ করে দর্শক শ্রোতার কাছে কোন খবর বা ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের এ ধরনের কার্যাবলী হলো মুখ্যকরণ। আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুখ্যকরণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ (হায়দার ও সামিন,২০১৪)। 

কাঠামোকরণঃ একটি ঘটনাকে একেকটি গণমাধ্যম একেকভাবে উপস্থাপন করে। কোনো ঘটনা বা ইস্যুকে কোনো বিশেষ আঙ্গিকে উপস্থাপন করার কৌশলকে কাঠামোকরণ বলে। যোগাযোগ গবেষক গিটলিন কাঠামোকরণ সম্পর্কে বলেছেন, “Frames are principaels of selection, emphasis and presentation composed of little tact theories about what existsx what happens, and what matters” (Gitlin, 1980).

অর্থাৎ কাঠামোকরণ হলো, কোন বিষয় বা ইস্যুকে নিজস্ব আঙ্গিকে উপস্থপন করার কৌশল। যেমনঃ ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়ন নীতিমালাকে মৌলবাদী ঘরনার গণমাধ্যমে ‘ইসলাম বিরোধী’ বলে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে প্রগতিশীল গণমাধ্যমে তা নারীর সম-অধিকাররের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে (হায়দার ও সামিন,২০১৪)। 

এই গবেষণায় দেখা হবে ম্যাককম্বস ও শ –এর আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিভাবে কাজ করেছে। এই সংবাদ (তনুর মৃত্যু) প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ভেদে দ্বার রক্ষন, মুখ্যকরণ ও কাঠামোকরণের ক্ষেত্রে পার্থক্য হয়েছে কিনা?

অধ্যায় ৩ গবেষণা পদ্ধতি 

এই গবেষণায় সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের মাত্রা ও ধরণ বিশ্লেষণ করার জন্য আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে। ম্যাককম্বস ও শ –এর আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের আলোকে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করে এই গবেষণা পরিচালিত হবে। 

৩.১ আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি

সাম্প্রতিককালে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি সামাজিক গবেষণায় একটি নতুন পদ্ধতি হিসেবে সংযোজিত হয়েছে। গণমাধ্যম গবেষণায় আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। গনযোগাযোগের বিভিন্ন বিষয় যেমন, প্রচারনা, বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠানমালার বিষয়, ধারা, স্টাইল, পরিবর্তন, গঠনযোগ্যতা বা গ্রহনযোগ্যতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিকে দলিল নির্ভর পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। কারণ এখানে মূলত ‘documents’ বা যোগাযোগের যাবতীয় লিখিতি বিষয়ের বিশ্লেষণ করা হয় (ইসলাম, ২০১০)। 

 

এই গবেষণায় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ (আধেয়) বিশ্লেষণ করা হবে। বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের মাত্রা ও ধরণ বের করার চেষ্টা করা হবে। গবেষণাটি আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে করা হবে কারণ সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সকল সংবাদ নথিবদ্ধ রয়েছে। কোন লিখিত বা নথিবদ্ধ বিষয় নিয়ে গবেষণা করার জন্য সবচেয় উপযুক্ত পদ্ধতি হলো আধেয় বিশ্লেষণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে গবেষণা করলে সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশের মাত্রা ও ধরণ বের করা সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে। 

৩.২ নমুনাসমগ্রক ও নমুনায়ন 

আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের আলোকে এই গবেষণাটি করার জন্য নমুনা হিসেবে উদ্দেশ্যমূলক নমুনায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের চারটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা নেয়া হবে। এই গবেষণার ক্ষেত্রে নমুনা সমগ্রক হলো বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যম (প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞাতে মূলধারার গণমাধ্যম বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা বলা আছে)। এই পত্রিকাগুলোর ২১ মার্চ ২০১৬ (তনুর মৃত্যুর পরদিন) থেকে পরবর্তী এক মাস অর্থাৎ ২১ এপ্রিল ২০১৬ পর্যন্ত প্রতিদিনের পত্রিকা নেয়া হবে। পত্রিকা চারটি হলো দৈনিক প্রথমআলো, দৈনিক কালেরকণ্ঠ, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ডেইলি স্টার। 

এই পত্রিকাগুলো বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যুক্তি হলো দৈনিক প্রথমআলো ও ডেইলি স্টার বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রচারিত যথাক্রমে বাংলা ও ইংরেজী পত্রিকা। এই পত্রিকাদুটির মতাদর্শ মোটামুটি এক। এবং বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে পত্রিকা দুটির স্পষ্ট অবস্থান থাকে। 

 

অপরদিকে দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও দৈনিক নয়াদিগন্ত বাছাইয়ের যুক্তি হলো দৈনিক কালেরকণ্ঠ তাদের সংবাদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সরকারের পক্ষে অবস্থান করে অন্যদিকে দৈনিক নয়াদিগন্ত পুরোপুরি ভাবে সরকারবিরোধী অবস্থান অবলম্বন করে। 

গবেষণাটিতে ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের সংবাদপত্র বাছাই করার মাধ্যমে সব ধরণের মতাদর্শের অন্তভুক্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। যাতে করে গবেষণার মাধ্যমে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়। 

অধ্যায় ৪ উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ 

উপাত্ত প্রক্রিয়াজাতকরণঃ সামাজিক গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সংগৃহীত তথ্যাবলি সথিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা। তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সামাজিক গবেষণায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার উদ্দেশ্যই হলো প্রাপ্ত তথ্যকে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে তথ্যসমূহকে এমনভাবে শ্রেণিবদ্ধ করা যাতে একটি ফলফল দাড় করানো সম্ভব হয়। 

গবেষণার তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করার জন্য কোডিং শিট তৈরি করা হবে। প্রতিটি পত্রিকার জন্য আলাদা কোডিং শিট থাকবে। এর মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হবে। যাতে করে সহজে তথ্য বিশ্লেষণ করা যায়। 

উপাত্ত বিশ্লেষণঃ উপাত্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতি হিসেবে এই গবেষণার ক্ষেত্রে গুনবাচক ও পরিমাণবাচক উভয় পদ্ধতি গ্রহন করা হবে। সোহাগী জাহান তনুর অস্বাভাবিক মৃত্যু সম্পর্কিত সংবাদ প্রকাশের মাত্রা বের করার ক্ষেত্রে পরিমাণবাচক পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। মাত্রা বের করার সময় উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা হবে কতটুকু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক্ষেত্রে ফলাফল প্রকাশ করা হবে ইঞ্চি,কলাম হিসেবে। 

অন্যদিকে সংবাদ প্রকাশের ধরণ বের করার সময় প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হবে গুনবাচক পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে দেখা হবে প্রকাশিত সংবাদ কোন ধরণের (ব্যাখ্যামূলক, বিশ্লেষণধর্মী, অনুসন্ধানী ইত্যাদি) সংবাদ কতটা প্রকাশ হয়েছে। কোন ধরণের সংবাদ কতটা প্রকাশিত হয়েছে সেই ফলাফল প্রকাশ করা হবে শতকরা হারে। 

 

সংবাদের শতকরা হার বের করার জন্য মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহার করা হবে এবং প্রয়োজনীয় লেখচিত্রের মাধ্যমে তা উপস্থাপন করা হবে। 

এছাড়া কোন ধরণের সংবাদ (ব্যাখ্যামূলক, বিশ্লেষণধর্মী, অনুসন্ধানী ইত্যাদি) কতগুলো প্রকাশ হয়েছে তা উপাত্ত বিশ্লেষণ করে টেবিলের মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। 

অধ্যায় ৫ সম্ভাব্য সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা

** গবেষণা নমুনার পরিমাণের তুলনায় প্রাপ্ত সময়ের স্বল্পতা। ফলে গভীর বিশ্লেষণ বাধাগ্রস্থ হতে পারে। 

** গবেষণা ব্যয় নিজেকে বহন করতে হবে। 

অধ্যায় ৬ সময়সূচি 


গবেষণাটি করার জন্য তিন মাস সময় লাগবে। এই তিন মাস সময়ের মধ্যে কাজটি যেভাবে করা হবে তার একটা নমুনা দেয়া হলো। 

কাজ/সপ্তাহ
১ম
২য়
৩য়
৪র্থ
৫ম
৬ষ্ঠ
৭ম
৮ম
৯ম
১০ম
১১
তম
১২
তম
প্রস্তুতি
x
x










ভূমিকা

x










প্রয়োজনীয় বই ও জার্নাল সংগ্রহ


X
x








সাহিত্য পর্যালোচনা



x
x
x






পদ্ধতি নির্বাচন ও নমুনায়ন





x






উপাত্ত সংগ্রহ






x





আধেয় বিশ্লেষণ 






x
x




প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ







x
x



খসড়া রিপোর্ট








x
x


মূল রিপোর্ট










x
X


 
অধ্যায় ৭ বাজেট 

গবেষণার জন্য যে পরিমাণ খরচ হবে তার বাজেট। 

ক্রমিক
বিবরণ
টাকা
প্রয়োজনীয় পুস্তক/জার্নাল ক্রয়
৪,০০০/=
ইন্টারনেট ও মোবাইল বিল
১,৫০০/=
ফটোকপি
৯০০/=
যাতায়াত
৮০০/=
প্রিন্ট করা ও বাইন্ডিং
৬০০/=
বিবিধ
৫০০/=
মোট খরচ
৮,৩০০/=

তথ্যসূত্রঃ 

Amin, A. M. (2016). Don't forget Tonu. Daily star, 26(72).

ByerlyCM. and Ross, K. (2006). Women and Media: A Critical Introduction. Retrieved may 15, 2016, from https://books.google.com.bd/books?hl=en&lr=&id=vWk1pR-BirAC&oi=fnd&pg=PR5&dq=women+representation+in+media+research&ots=QfphQyZtb1&sig=mee2wXXBLhYqGRjJbr0GkTF8yu8&redir_esc=y#v=onepage&q=women%20representation%20in%20media%20research&f=false

Giltin, T. (1980). The Whole World Is Watching: Mass Media in the marking and unmarking of the New Left. Los Angeles: University of California Press.

Gupta, R. k. (Director). (2011). No one killed jessica [Motion Picture].

Unnatural Death (2013). Collins Dictionary. Retrieved may 09, 2016, from http://www.collinsdictionary.com/dictionary/english/unnatural-death

Webster, A. (2011, Jan 09). An Indian Murder Reverberates on Film. The New York Times. Retrieved may 12, 2016, from http://www.nytimes.com/2011/01/10/movies/10noone.html?_r=0

আলীহা. (২০১৩)। সামাজিক গবেষণা ও পরিসংখ্যান।  ঢাকা : অনু প্রকাশনী

ইসলামমো. (২০১০) সামাজিক গবেষণা।  ঢাকা : তাসমিয়া পাবলিকেশন্স

উদ্দিনসা. (২০১৬)। তনুর লাশ উত্তোলন ইত্তেফাক৬৩ (৯৬ )

চৌধুরী. (২০১৪) বাংলাদেশে হলুদ সাংবাদিকতাঃ প্রবনতা ও প্রকরণ. Retrieved may 05, 2016, from http://pib.portal.gov.bd/sites/default/files/files/pib.portal.gov.bd/page/6a218d81_b02c_4480_957a_5b527fa5c0c1/Halud%20sangbadikota.pdf

বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা  (২০১৬) Retrieved may 14, 2016, from http://www.bnwlabd.org/?p=5895

বিচার বহির্ভূত হত্যা (২০১৬, জানু ১) দৈনিক নয়াদিগন্ত Retrieved may 10, 2016, from http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/81767

বিবিসি বাংলা  (২০১৪) Retrieved may 13, 2016, from http://www.bbc.com/bengali/news/2015/08/150813_sr_child_rape_feature

রহমান. (২০০৭) সাংবাদিকতাঃ ধারণা ও কৌশল ঢাকাশ্রাবন প্রকাশনী

রায়, সু. শে. (১৯৯৪)। সাংবাদিকতা সাংবাদিক ও সংবাদপত্র। ঢাকা: ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার।

শফিকুর. (১৯৯৫ ) নির্বাচন ও গণমাধ্যমঃ একটি পর্যালোচনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিস

হায়দার, শা. এবং সামিন, সা. (২০১৪) গণযোগাযোগ তত্ত্ব ও প্রয়োগ।  ঢাকাবাংলাদেশ প্রেস ইনন্সিটিউট
হকরিসু. (১৯৯৬জুলাই-আগস্ট ) অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনঃ বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ নিরীক্ষা-১৬

4 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. bdresearchjournal.blogspot.com
    গবেষণা প্রকাশের এত নতুন মাধ্যম

    ReplyDelete
  3. good research topic and findings and analysis also good

    ReplyDelete