Tuesday, November 1, 2016

রোকনুজ্জামান খান “দাদাভাই”

রোকনুজ্জামান খান “দাদাভাই” ১৯২৫ সালের ৯ এপ্রিল রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৌলভী মোখাইরউদ্দীন খান ও মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। তার নানা রওশন আলী চৌধুরী ছিলেন ‘কোহিনূর’ পত্রিকার সম্পাদক। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে পাংশায়, নানাবাড়িতে। তিনি সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের কন্যা নূরজাহান বেগমকে বিয়ে করেন। নূরজাহান সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

                  রোকনুজ্জামান খান “দাদাভাই”                           

তার কর্মজীবন শুরু হয় কলকাতায়। ১৯৪৬ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতর মধ্যেই আত্মপ্রকাশ করে “ইত্তেহাদ” নামের একটি পত্রিকা । ছাত্রাবস্থাতেই পত্রিকাটির শিশুপাতা “মিতালী মজলিস” এর সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন রোকনুজ্জামান খান। পড়াশোনা শেষে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন রোকনুজ্জামান খান। পরবর্তীকালে তিনি কাজ করেন ইত্তেহাদ (১৯৪৭), শিশু সওগাত (১৯৪৯) ও দৈনিক মিল্লাত (১৯৫১) পত্রিকায়।

তিনি ইত্তেহাদের ‘মিতালী মজলিস’ এবং মিল্লাতের ‘কিশোর দুনিয়া’ নামের শিশুপাতা সম্পাদনা করতেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় যোগদান করে ‘দাদাভাই’ ছদ্মনামে শিশুদের পাতা ‘কচি-কাঁচার আসর’ সম্পাদনা শুরু করেন এবং আমৃত্যুর এ পত্রিকায় জড়িত ছিলেন। আর এ থেকেই তিনি ‘দাদাভাই’ নামে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন।

রোকনুজ্জামান নিজে অনেক কবিতা ও ছড়া লিখেছেন এবং শিশুদের লেখা সংশোধন ও সম্পাদনা করে পত্রিকায় প্রকাশ করেছেন। শিশুদের চিত্তবৃত্তির উন্মেষ ও প্রতিভার বিকাশে তিনি নিরলস প্রয়াস চালিয়েছেন পুরো জীবন জুড়ে। তিনি বিশ্বাস করতেন আগামী দিনের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদের সৃজনশীল বিকাশের বিকল্প নেই। আর সেজন্যই ‘কচি-কাঁচার আসর’ আসরের কার্যক্রম দেশব্যাপী বিস্তার ঘটিয়েছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি ‘কচি ও কাঁচা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা ও প্রকাশ করেন।

রোকনুজ্জামানের অপর একটি বড় অবদান ‘কচি-কাঁচার মেলা’ (১৯৫৬) নামে একটি শিশুসংগঠন প্রতিষ্ঠা। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টায় এর শাখা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় এর মূল কেন্দ্র অবস্থিত। এই প্রতিষ্ঠানে শিশুদের গান, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ছিলেন স্বপ্ন গড়ার কারিগর। তিনি এই দেশের অসংখ্য কোমলমতি শিশুদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন।

তিনি সৃজনশীল ও সাংগঠনিক কর্মের পুরস্কারস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৮), শিশু একাডেমি পুরস্কার (১৯৯৪), একুশে পদক (১৯৯৮), স্বাধীনতা পদক (১৯৯৯), জসিমউদ্দীন স্বর্ণপদক এবং রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ও রোটারি ফাউন্ডেশন ট্রাস্টির পল হ্যারিস ফেলো সম্মানে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালের ৩ ডিসেম্ব্বর, মারা যান সবার প্রিয় দাদাভাই। 



No comments:

Post a Comment