Tuesday, November 1, 2016

টেকসই উন্নয়ন কি সত্যই তৃতীয় বিশ্বকে উন্নত করছে?

আশির দশকের শেষ দিকে উন্নয়নের যে নতুন ধারণা গড়ে উঠেছিল তাকে আমারা টেকসই উন্নয়ন বলে অভিহিত করছি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় বেশির ভাগ উন্নয়ন ও সাহায্য সংস্থা, এনজিও এবং একাডেমিক স্কলাররা এই ধারনাকে সমর্থন করে। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতির কথা বলা হয়েছে, যা সমর্থন করে মিল্টন ফ্রিডম্যান প্রচারিত নব্য-উদারতাবাদকে। যেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণকে নিরুৎসাহিত করে সকল ক্ষেত্রে বিনিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। এবং বলা হয়ে থাকে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ না করলেই তা উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে। তবে সব ক্ষেত্রে এই পূর্বানুমান সঠিক হয় না। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাই। 

উদাহরণস্বরূপ ল্যাতিন আমেরিকার কথা বলা যায়, ১৯৪৫ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত সরকার নিয়ন্ত্রিত ল্যাতিন আমেরিকাতে ৩.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে কিন্তু ১৯৯০ সালের পর সেখানে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করার পর প্রবৃদ্ধি হার কমে ১.৬ শতাংশে নেমে আসে। [peters, dussel, (2003), the dictatorship of the macroeconomy in latin america.]

উন্নয়নকে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কারণে অনেক ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়, এবং প্রচুর সময় ও সম্পদ ব্যয় করার পরও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হয় না। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধরেই নেয়া হয় যে তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর মত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নিজস্ব সামাজিক উপাদানগুলোকে আমলে নেয়া হয় না। 

এই প্রবনতাকে সমালোচনা করা হয়েছে post structuralist ধারণাতে। এবং পশ্চিমা ও স্থানীয় সংস্কৃতির মিশেলে নতুন ধরণের সংস্কৃতি গড়ে তোলার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এই ধারণাতে বিভিন্ন সমাজের নিজস্ব উপাদান ও কাঠামোগত পার্থক্যকে স্বীকার করা হয়েছে। 

এপ্রসঙ্গে The New York Times এর একটি সংবাদ প্রণিধানযোগ্য, এখানে একজন ভারতীয় অধ্যাপক বলেন, “how to bring the country’s (india) thousands of thousands villages into 21th century” 

যেন ভারতীয় সমাজ এখনও ২১ শতাব্দীতে আসে নি। পশ্চিমের সাথে তুলনা করলে আমরা এই কথার যৌক্তিকতা খুঁজে পাই। ইউরোপ-আমেরিকার বাস্তবাতার সাথে উন্নয়নশীল দেশের তুলনা করলে আমরা বিষয়টি বুঝতে পারব। 

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে আমরা বিষয়টি সহজে বুঝতে পারব। আমাদের মতো গরীব দেশ যেখানে মানুষকে অন্ন, বস্ত্রের মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয় সেখানে যদি পশ্চিমের আদলে উন্নয়ন পরিকল্পনা করা হয় তা কোনভাবেই টেকসই হবে না। 

বিশ্বব্যাংক, ইউনেস্কোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম অনেক ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারে না তার একটি অন্যতম কারণ স্থানীয় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে বিবেচনা না করা। উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। 

Escobar এপ্রসঙ্গে বলেন ‘Development projects that do not take into account the historical development of the communities they are supposed to develop end up destroying their culture and identity.’ 

তিনি উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিদিষ্ট গোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের উপর গুরুতারোপ করেছেন। তার মতে প্রথাগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি অন্যতম সমস্যা হল আর্থ-সামাজিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নেয়া।

No comments:

Post a Comment