রুয়ান্ডা গনহত্যা

ধর্মীয়, জাতীয়, বর্ণবাদী, উপজাতি গোষ্ঠীকে ইচ্ছাকৃতভাবে কৌশলে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার চেষ্টাটাই গণহত্যা। কোনো বাচ-বিচার নেই। নারী-পুরুষ, কিশোর, কিশোরী ও শিশু কেউ রেহাই পাচ্ছে না। সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় গনহত্যা হয়েছে ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায়।

রুয়ান্ডা গণহত্যা রুয়ান্ডাতে তুতসিদের বিপক্ষে গণহত্যা বলে পরিচিত। ১৯৯৪ সালের ৭ এপ্রিল থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মানুষ হত্যার শিকার হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী তুতসি সম্প্রদায়ের শতকরা ৭০ ভাগ এবং রুয়ান্ডার মোট জনসংখ্যার ২০ ভাগ মানুষ এই হত্যার শিকার হয়।
রুয়ান্ডা গণহত্যার একটি গণকবর 


১৯৯০ সালে শুরু হওয়া হুটু সমর্থিত সরকার এবং রুয়ান্ডা পেটরিওটিক ফ্রন্ট (আরপিএফ) এর মধ্যে সংঘটিত সংঘর্ষ থেকে এক সময় তা রুয়ান্ডার গৃহ যুদ্ধে রূপ নেয়। তুতসিদের বিরুদ্ধে হুটুদের হিংস্রতার কারণে তুতসি জনসংখ্যার বড় একটা অংশ উগান্ডায় পালিয়ে যেতে থাকে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হওয়ায় ১৯৯৩ সালে যুদ্ধ বিরতি ঘোষিত হয়।

যুদ্ধ বিরতির সময় দেশ পরিচালনা এবং সংকট সমাধানে একটা রোডম্যাপ তৈরি হয়, যেখানে আরপিএফের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির কথা বলা হয়। এই চুক্তিতে রক্ষণশীল হুটুরা মোটেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তারা এটাকে বিরোধী দলের জয় মনে করছিল। ১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল রুয়ান্ডা ও বুরুন্ডির দুই প্রেসিডেন্ট তাঞ্জানিয়া থেকে ফেরার পথে সহযাত্রীসহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। ধারণা করা হয় রকেট হামলায় তাদের বিমান ধ্বংস হয়।
শরণার্থী ক্যাম্প 


রুয়ান্ডাতে এ ঘটনার পর দিনই শুরু হয়ে যায় গণহত্যা। সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং মিলিশিয়ারা যাচ্ছেতাইভাবে তুতসিদের ধরে হত্যা করতে থাকেন। এই সব বাহিনীর সদস্যরা নিজেরা তো অত্যাচার চালিয়েছে, তার ওপর হুটু নাগরিকদের নিজেদের দলে নিয়েছে এবং তাদের হাতে তুলে দিয়েছে বিভিন্ন রকম অস্ত্র।

এ অবস্থায় আরপিএফ আক্রমণাত্মক ভূমিকা নেয় এবং দ্রুত দেশের উত্তরাঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরবর্তীতে জুলাইয়ে মাঝামাঝি সময় তারা কিগালি দখল করে নেয়। এর পরই গণহত্যার হার কমতে থাকে। এই গনহত্যার সময় এবং তার পরের অবস্থায় নিশ্চুপ থাকায় জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম নিষ্ক্রিয় থাকায় চরমভাবে সমালোচিত হয়েছিল। এছাড়া গণহত্যা শুরুর পর হুটু নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করায় ফ্রান্স সরকারের সমালোচনা করে পর্যবেক্ষকরা।

লড়াইয়ের সময় অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়ায় এবং নাগরিকরা অন্য দেশে চলে যাওয়ায় অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। নতুন সরকারের জন্য দ্রুত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। আরপিএফ সেনাবাহিনীর জয় এবং আরপিএফ আধিপত্য সরকার গঠনে অনেক হুটু প্রতিবেশি দেশে পালিয়ে যায়। তাদের অনেকেই কঙ্গোতে আশ্রয় নেয়।
হোটেল রুয়ান্ডা মুভির একটি দৃশ্য 
এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে ২০০৪ সালে Terry George হোটেল রুয়ান্ডানামে একটি মুভি নির্মাণ করেন। 

No comments:

Post a Comment