আর্মেনীয় গণহত্যা

কয়েক শতাব্দীর পারস্য ও বাইজানটাইনের শাসনের পরে ১৯ শতকের মাঝামাঝি নাগাদ রুশ ও তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যে বাস করছিল আর্মেনীয়রা। অটোমান সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে ১৭ থেকে ২৩ লাখ আর্মেনীয় বাস করত। ১৯ শতকের শেষের দিকে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে অটোমান কর্তৃপক্ষ আনুগত্যের প্রশ্নে আর্মেনীয়দের সন্দেহের চোখে দেখতে থাকে।
গনহত্যার ছবি 



১৯১৪ সালে জার্মানি ও অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি সাম্রাজ্যের পক্ষ নিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয় তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য। যুদ্ধ চলাকালে অটোমান কর্তৃপক্ষ আর্মেনীয়দের ঘরের শত্রুবলে প্রচারণা চালাতে থাকে। ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল অটোমান সরকারের শত্রু বলে সন্দেহে আর্মেনীয়  সম্প্রদায়ের কয়েক শত নেতা ও বুদ্ধিজীবীকে কনস্টান্টিনোপলে (বর্তমান ইস্তাম্বুল) বন্দী করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁদের বেশির ভাগকেই হত্যা ও নির্বাসিত করা হয়।



প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দুটি আইনের মাধ্যমে আর্মেনীয়দের নির্বাসিত ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। তখন হাজার হাজার আর্মেনীয়কে মরুভূমির দিকে (বর্তমান সিরিয়ায়) পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে যায়, তাদের ২৫টি বন্দিশিবিরে নেওয়া হয়। তখনকার বিদেশি কূটনীতিক ও গোয়েন্দা সংস্থার মতে, আগুনে পোড়ানো, পানিতে ডোবানো, বিষপ্রয়োগ এবং টাইফয়েড সংক্রমিত করাসহ বিভিন্ন নৃশংস পদ্ধতিতে আর্মেনীয়দের হত্যা করা হয়।

ক্যাম্পের ছবি

বলা হয়ে থাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ১৫ লাখ আর্মেনীয়কে হত্যা করে অটোমান তুর্কীরা। লাখ লাখ আর্মেনীয়কে করা হয় বাস্তুচ্যুত। তবে তুরস্ক বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তুরস্কের ভাষ্য, সুনির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হত্যাযজ্ঞ পরিচালিত হলে তাকে গণহত্যা বলা যেতে পারে। তুরস্ক সরকারের দাবি, সে সময় একটি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী হিসেবে আর্মেনীয়দের টার্গেট করে গণহত্যা চালানো হয়নি।



অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি রাষ্ট্র তুরস্ক আর্মেনীয়দের হত্যা ও নির্বাসনকে উভয় পক্ষের জন্য রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের ফল হিসেবে বর্ণনা করে আসছে। তাদের দাবি, আর্মেনীয়রা যখন রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে অটোমান সরকারের বিরুদ্ধে তৎপর হয়, তখন গৃহযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ আর্মেনীয় ও একইসংখ্যক তুর্কি মারা যায়।। তবে তুরস্কের এই দাবি ধোপে টেকে না। বরং সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত তুর্কী ঔপন্যাসিক ওরহান পামুকসহ সে দেশের অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক-সাংবাদিক-চলচ্চিত্রকারও আর্মেনীয় হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা বলে অভিহিত করে থাকেন। এর জন্য তারা বিভিন্ন সময়ে নিগৃহীতও হয়েছেন। 

গণকবরের ছবি

১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কনস্টান্টিনোপলের সামরিক আদালত আর্মেনীয়দের হত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অটোমান সাম্রাজ্যের কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। আদালত তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের বিচার করা যায়নি।


No comments:

Post a Comment