Monday, April 24, 2017

দ্যা হলোকস্ট

মানবসভ্যতার ইতিহাসে এযাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে বিবেচনা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মান নাৎসি সামরিক বাহিনী ইউরোপ জুড়ে ইহুদী জনগোষ্ঠীর উপর যে নির্মম হত্যাকান্ড চালায় তা ইতিহাসে হলোকস্ট (The Holocaust) নামে পরিচিত।
এডলফ হিটলার


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন এডলফ হিটলারের নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল সোসালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির পরিচালিত গণহত্যায় তখন আনুমানিক ষাট লক্ষ ইহুদি এবং আরও অনেক সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ প্রাণ দিয়েছে।

সবচেয়ে বেশি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ম্যাসেডোনিয়ায়। সেখানে ইহুদি জনসংখ্যার ৯৮% মারা গিয়েছিলেন হলোকস্টেশতকরা হিসেবে আর কোনও দেশে এত ইহুদি যুদ্ধের নিধনযজ্ঞে প্রাণ হারাননি।
ক্যাম্পের ছবি
হিটলারের বাহিনী ষাট লক্ষ ইহুদি ছাড়াও সোভিয়েত যুদ্ধবন্দী, কমিউনিস্ট, রোমান ভাষাগোষ্ঠীর জনগণ, অন্যান্য স্লাবিক ভাষাভাষী জনগণ, প্রতিবন্ধী, সমকামী পুরুষ এবং ভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মতাদর্শের মানুষদের ওপর অমানবিক গণহত্যা পরিচালনা করে।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাৎসি সামরিক বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের শিকার সকল মানুষকে 'হলোকস্ট' এর আওতায় ধরা হয় না। 'হলোকস্ট' এর মাধ্যমে শুধু ইহুদীদের হত্যাকে বোঝানো হয়। নাৎসি অত্যাচারের সকল ঘটনা আমলে নিলে নিহতের সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদরা।
গ্যাস চেম্বার

ইহুদীদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও গণহত্যার ঘটনা বিভিন্ন পর্যায়ে সংঘটিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগেই নাগরিক সমাজ থেকে ইহুদিদের উৎখাতের জন্য জার্মানিতে আইন প্রণয়ন করা হয়।
যুদ্ধের সময় বিভিন্ন জনাকীর্ণ বন্দী শিবিরে রাজনৈতিক ও যুদ্ধবন্দীদেরকে ক্রীতদাসের মতো কাজে লাগানো হতো, যাদের অধিকাংশই কাজ করতে করতে অবসন্ন ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে  মারা যেত। নাৎসি জার্মান বাহিনী লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ ইহুদীদের হত্যা করেছে গুলি করে ও গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে।
১৯৪৫ সালে যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে হলোকস্টের। ২য় বিশ্বযুদ্ধের হত্যাকাণ্ড নিয়ে অনেক গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে বহু চলচ্চিত্র, ডকুমেন্টারি। এগুলোর মধ্যে Schindler's List, The Pianist, Saving Private Ryan, Downfall, Grave of the fireflies, Casablanca ইত্যাদি অন্যতম।
অ্যানা ফ্রাঙ্ক
হলোকস্টের কতটা নির্মম ছিল তা খুব ভাল ভাবে বোঝা যায় অ্যানা ফ্রাঙ্কএর ডাইরী পড়লে। এটি বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত রোজনামচার। এই গণহত্যাকে স্মরণ করে প্রতি বছরের ২৭ জানুয়ারীকে হলোকস্ট ডেহিসেবে পালন করা হয়।

No comments:

Post a Comment