খালিস্তান আন্দোলন

ভারতের শিখরা “খালিস্তান” নামে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র চায়। এই দাবীর পেছনে ধর্মীয়, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে। শিখ সম্প্রদায় ভারতের পাঞ্জাব অঞ্চলে শতাব্দীকাল ধরে বাস করে আসছে এবং তাদের নিজস্ব ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় পাঞ্জাব দুই ভাগ হয়ে যায় এবং শিখরা নিজেদের ভূমি হারায়, যা তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। সেসময় থেকেই তারা নিজস্ব রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা শুরু করে।

১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলন তীব্র হয়। শিখরা স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। তাদের অভিযোগ ছিল যে, ভারত সরকার শিখদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার যথাযথভাবে সম্মান করে না।

১৯৮৪ সালে শিখদের এই আন্দোলন দমনের জন্য ভারত সরকার অপারেশন ব্লু স্টার পরিচালনা করে। যেখানে ভারতীয় সেনাবাহিনী শিখদের পবিত্র স্বর্ণ মন্দিরে অভিযান চালায়। এই অভিযান শিখদের মধ্যে আরও ক্ষোভ সৃষ্টি করে এবং আন্দোলন তীব্র হয়।

অভিযান পরিচালনাকালে শিখরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতিরোধ এত বেশি ছিল যে, একপর্যায়ে সেনাবাহিনী ট্যাংক ও বিমান থেকে গোলাবর্ষণ করে। সামরিক অভিযানে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকারি হিসেবে ৮৩ জন সেনাসদস্য নিহত এবং ২৪৯ জন সেনাসদস্য আহত হওয়ার কথা বলা হয়েছিল এবং শিখ সম্প্রদায়ের মৃত্যু সংখ্যা দেখানো হয় ৪৯৩। কিন্তু বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দু’পক্ষ মিলিয়ে হতাহতের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

সে বছরেরই ৩১ অক্টোবরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখ দেহরক্ষীর হাতে নিহত হলে শিখদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বৃদ্ধি পায়। পরের বছর কানাডাপ্রবাসী শিখরা এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এই বিস্ফোরণে বিমানে অবস্থানরত ৩২৯ জনের সবাই মৃত্যুবরণ করে।

 

খালিস্তান আন্দোলন এখনো চলমান রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত শিখ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা শিখ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে চলেছে।

 

No comments:

Post a Comment