গণমাধ্যম থেকে তথ্য পেয়ে থাকে। চারপাশে কি ঘটছে তা জানার অন্যতম বাহন হলো গণমাধ্যম। তথ্য প্রদান করার পাশাপাশি গণমাধ্যম ন্যারেটিভ তৈরি করে থাকে। অর্থাৎ মানুষ কি ভাববে, কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা-সমালোচলা করবে ইত্যাদি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখে। তথ্য উপস্থাপনার পদ্ধতি এবং ভাষার ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে ন্যারেটিভ সেট করার কাজটি হয়ে থাকে।
গণমাধ্যম
ন্যারেটিভ সেট করার কিছু উপায় হল:
১. তথ্যের নির্বাচন ও উপস্থাপন
গণমাধ্যমে
কোন খবর বা ঘটনা তুলে ধরা হবে এবং কোনটা বাদ পড়বে, সেটি ন্যারেটিভ নির্মাণে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ ঘটনা বা সমস্যাকে গুরুত্ব দেয়া এবং অন্য
বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গণমাধ্যম
সহায়তা করে।
২. ফ্রেমিং
ফ্রেমিং হলো
একটি ঘটনা বা পরিস্থিতিকে নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করা। মিডিয়া একটি
ঘটনাকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে জনগণের ধারণা ও মতামত নির্ধারনে ভূমিকা
রাখে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের সংগ্রামকে কোন কোন গণমাধ্যম
'সন্ত্রাস' হিসেবে উপস্থাপন করে আবার অনেক গনমাধ্যমে এই যুদ্ধকে 'প্রতিরোধ' হিসেবে
উপস্থাপন করা হয়।
৩. ভাষার ব্যবহার
গণমাধ্যমে
ব্যবহৃত ভাষা খুবই প্রভাবশালী। যেমন 'সন্ত্রাসী' বনাম 'সংগ্রামী' বা 'অন্যায়' বনাম
'প্রতিরোধ', একটি ঘটনার ন্যারেটিভকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিতে পারে। নেতিবাচক বা
ইতিবাচক শব্দ চয়ন করে মিডিয়া একটি ঘটনা সম্পর্কে মানুষকে দৃষ্টিকোণ গড়ে দিতে পারে।
৪. চিত্রায়ণ
গণমাধ্যমে যে
চিত্র বা ছবি দেখানো হয় তা দর্শকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, যুদ্ধের
ছবি বা দুর্ভিক্ষের ছবি বেশি প্রকাশ করা হলে, এটি মানবিক অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে
এবং মানুষের মধ্যে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে।
৫. মিথ তৈরি ও প্রচার
গণমাধ্যম
মাঝে মাঝে নির্দিষ্ট ধারণা বা মিথ তৈরি এবং প্রচার করে। যেমন, বিশেষ কোনো গোষ্ঠী
বা ব্যক্তি সম্পর্কে তৈরি হওয়া মিথ (যেমন, "এরা সবসময় অস্থিরতা সৃষ্টি
করে") গণমাধ্যমের মাধ্যমে বারবার প্রচারিত হলে এটি জনমানসে একটি প্রতিষ্ঠিত
ন্যারেটিভ হয়ে ওঠে।
উপর্যুক্ত
পদ্ধতিতে গণমাধ্যম একটি নির্দিষ্ট ন্যারেটিভ তৈরি করে, যা মানুষদের ভাবনা এবং
সমাজের মানসিকতা গঠন করতে সাহায্য করে।
No comments:
Post a Comment