সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব (Social Learning Theory) মনোবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এই তত্ত্ব ব্যবহার করে মানুষের আচরণ, চিন্তা এবং মানসিকতার উপর সামাজিক পরিবেশের প্রভাব ব্যাখ্যা করা হয়। তত্ত্বের মূল ধারণা হলো, আমরা আমাদের চারপাশের মানুষের আচরণ, অনুভূতি এবং মূল্যবোধ দেখে এবং অনুকরণ করি।
সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্বের মূল উপাদানসমূহ:
- অনুকরণ (Modeling): মানুষ অন্যদের আচরণ অনুকরণ করে। বিশেষত
যাদের তারা শ্রদ্ধা করে। যেমন, শিশুরা বড়দের আচরণ অনুকরণ করে, এবং এটি তাদের ভবিষ্যতের
আচরণকে প্রভাবিত করে।
- মনোযোগ (Attention): ব্যক্তি যখন কোনো পরিস্থিতি বা মানুষের
আচরণ দেখেন, তখন তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে হয়। যা তাদের শেখার প্রক্রিয়া শুরু করে।
- সংরক্ষণ (Retention): শেখা বা জানার পর মানুষকে সেই বিষয় মনে
রাখতে হবে। অর্থাৎ, ব্যক্তি যা শিখেছে, তা তাকে মনে রাখতে ও পুনরায় প্রয়োগ করতে পারতে
হবে।
- পুনরাবৃত্তি (Reproduction): একবার কিছু শিখে নেওয়ার পর, সেই কাজ
পুনরায় করতে সক্ষম হতে হয়। যার মাধ্যমে একজন মানুষ দক্ষতা অর্জন করে।
- প্রতিক্রিয়া (Reinforcement): কোন কিছু শেখার ফলে ব্যক্তি ইতিবাচক
বা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লাভ করে। যেমন, পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করলে প্রশংসা এবং খারাপ
ফল করলে তিরস্কারের মুখোমুখি হয়। এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্তির ভবিষ্যত আচরণকে প্রভাবিত
করে।
অনেকেই মনে করেন সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব কেবল এক ধরনের পর্যবেক্ষণ (observation) ও অনুকরণ (imitation)-এর ভিত্তিতে আচরণ ব্যাখ্যা করে, যা কখনো কখনো অতিরিক্ত সরলীকৃত হতে পারে। এটি কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ উপাদানের গুরুত্ব উপেক্ষা করে। তবে সামাজিক শিক্ষণ তত্ত্ব মানুষের আচরণের মৌলিক উপাদানগুলোকে বোঝানোর জন্য সহায়ক।
No comments:
Post a Comment