শান্তি সাংবাদিকতার সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য

শান্তি সাংবাদিকতা (Peace Journalism) হলো সাংবাদিকতার একটি বিশেষ শাখা যা সহিংসতা, যুদ্ধ বা অস্থিরতার পরিস্থিতিতে ইতিবাচক সমাধান খুঁজে বের করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংবাদ পরিবেশন করে। এর মূল লক্ষ্য সকল ধরনের সংকটের সংবাদ প্রকাশে এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা, যা শান্তি, সহনশীলতা ও সংলাপের গুরুত্ব তুলে ধরে। শান্তি সাংবাদিকতার বিপরীতে রয়েছে যুদ্ধ সাংবাদিকতা। যা সংঘর্ষের উত্তেজনাপূর্ণ দিককে বেশি গুরুত্ব দেয় এবং সহিংসতা বা বিভাজন সৃষ্টি করে।

শান্তি সাংবাদিকতার বৈশিষ্ট্য:

  • শান্তি সাংবাদিকতা কেবল সংঘর্ষের পেছনের কারণগুলো (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক) বিশ্লেষণ করে। এর মাধ্যমে পাঠক বা দর্শককের সামনে সংঘর্ষের জন্য দায়ীদের মুখোশ উন্মোচন এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের উপায় প্রস্তাব করা হয়।
  • শান্তি সাংবাদিকতা দ্বন্দ্বের পক্ষগুলোর মধ্যে সংলাপ (dialogue) এবং আলোচনা উৎসাহিত করা হয়।
  • শান্তির সম্ভাবনা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ইতিবাচক উদাহরণ বা উদ্যোগ তুলে ধরা হয়। এটি সংঘর্ষ বা সংকটের বিষয়ে শুধু নেতিবাচক দিকের পরিবর্তে, শান্তি ও পুনর্মিলনের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
  • শান্তি সাংবাদিকতা জনগণ, সম্প্রদায় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠায় জনগণের অংশগ্রহণ এবং তাদের উদ্বেগের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়।
  • শান্তি সাংবাদিকতা দ্বন্দ্বের প্রতি একটি ন্যায্য দৃষ্টিকোণ নেয়, যেখানে পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত থেকে বিষয়গুলিকে বিশ্লেষণ করা হয়। এতে পেশাদারিত্ব এবং নিরপেক্ষতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

শান্তি সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য:

  • শান্তির প্রচার
  • বিভাজন কমানো
  • সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন
  • গণসচেতনতা সৃষ্টি

শান্তি সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ:

  • অনেক সময় সংবাদমাধ্যমগুলি ধ্বংসাত্মক বা উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়, কারণ সেগুলি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
  • সংবাদমাধ্যমের কাছে রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক কারণে শান্তিপূর্ণ বার্তা প্রচার করা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নাও হতে পারে, কারণ সাধারণত সংঘর্ষের ঘটনা, বিশেষ করে সহিংসতা, বেশি জনপ্রিয় হয়।
  • রাজনৈতিক বা সামাজিক আদর্শের প্রতি পক্ষপাতিত্ব থাকা ।

শান্তি সাংবাদিকতা সাংবাদিকতার একটি শক্তিশালী শাখা, যা সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সহিষ্ণুতা, এবং আন্তঃসম্পর্কের উন্নতি সাধনে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে সমাজের মধ্যে সংঘর্ষ বা সহিংসতার প্রতি সচেতনতা ও সমাধান সৃষ্টি করা সম্ভব, যা সমাজের উন্নতি এবং শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

No comments:

Post a Comment