মহামন্দা (Great Depression) বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকটের সময়কাল। ১৯২৯ সালে মহামন্দা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলেও ১৯৩০-এর দশক জুড়ে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ মন্দার প্রভাবে ভুগেছে।
মহামন্দার
কারণ:
- শেয়ার বাজার ধ্বস:
১৯২৯ সালের অক্টোবর মাসে নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে বিশাল মূল্যহ্রাসের ফলে মার্কিন
অর্থনীতি মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত হয়। স্টক মার্কেটের পতন ছিল মহামন্দার শুরুর
প্রাথমিক কারণ।
- অতিরিক্ত উৎপাদন
এবং চাহিদার অভাব: ১৯২০-এর দশকে বিশ্বব্যাপী শিল্প
উৎপাদন ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। কিন্তু ক্রয় ক্ষমতা ও চাহিদা সেভাবে বাড়েনি। ফলে
ব্যাপক মজুদ এবং উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ফলে ব্যবসায়িক ভারসাম্য নষ্ট।
- ব্যাংক ব্যবস্থা
এবং ঋণ সংকট: ১৯২০-এর দশকে বহু ব্যাংক অনিয়ন্ত্রিত
ঋণ প্রদান শুরু করে। ঋণগ্রহীতারা ঋণের অর্থ স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করে। ১৯৩০ এ শেয়ার
বাজারের ব্যাপক পতনের ফলে ব্যাংকিং খাত ধাক্কা খায় যা সংকটের সৃষ্টি করে।
- নীতি ও শুল্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক নীতি (যেমন, স্মুট-হাওলি ট্যারিফ আইন, ১৯৩০) আন্তর্জাতিক
বাণিজ্যকে বাধাগ্রস্ত করে যা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে আরো গভীর হয়েছিল।
মহামন্দার
প্রভাব:
- অর্থনৈতিক মন্দা:
বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে যায়। হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারায় এবং
দরিদ্র হয়ে পড়ে।
- বেকারত্ব:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ২৫% পর্যন্ত পৌঁছেছিল। ইউরোপে এবং অন্যান্য
দেশেও বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পায়।
- ব্যাংক ও
ব্যবসায়িক পতন: বহু ব্যাংক এবং ছোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে
যায়। যার ফলে অর্থনৈতিক মন্দা আরো তীব্র হয়।
- মুদ্রাস্ফীতি এবং
মূল্যহ্রাস: অনেক দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং
মূল্যহ্রাস ঘটে, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
১৯৩০-এর মহামন্দা
শেষ হতে প্রায় এক দশক সময় লাগে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের
নিউ ডিল (New Deal) নীতি স্থিতিশীলতা ফেরাতে সাহায্য করে। এই নীতি অনুসরণ করে সরকারী
হস্তক্ষেপের দ্বারা বেকারত্ব মোকাবিলা, ব্যাংক পুনর্গঠন এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠন করা
হয়। অন্যান্য দেশগুলোও তাদের নিজেদের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন নীতির দিকে মনোনিবেশ করে।
No comments:
Post a Comment