কেস স্টাডি ১
পণ্যের নামঃ ওমেরা এলপিজি
বিবরণঃ বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায় একজন মডেল হাসিমুখে রান্না করছেন। তার সামনে রান্নার বিভিন্ন উপকরণ সাজানো রয়েছে।
জেন্ডার অসংবেদনশীলতাঃ
বিজ্ঞাপনটির বাম পাশে লেখা রয়েছে “রান্নার পারফেক্ট পার্টনার, গ্যাসের কথা ভেবে আর পরিবারের কারো আবদার অপূর্ণ থাকবে না।”
তার পাশেই দেখা যায় একজন মডেল হাসিমুখে রান্না করছে। তার হাসি দেখলে মনে হয় তার জন্মই যেন হয়েছে রান্না করার জন্য। আগুনের পাশে রান্না করলেও তার চোখে মুখে কোন বিরক্তি বা ক্লান্তির ছাপ নেই।
এখানে জেন্ডারের stereotype ধারণা প্রকাশ পেয়েছে। এই বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে রান্না করা নারীদের কাজ।
তার পোশাক এবং দাঁড়ানোর ভঙ্গির মাধ্যমে তাকে যৌন আকর্ষণীয় এবং ট্রিপিকাল নারী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
কেসস্টাডি ২
পণ্যের নামঃ রিভাইভ ট্যালকম পাউডার
বিবরণঃ বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যায় তিনটি মেয়ে পা উচু করে দাড়িয়ে আছে। ডান পাশে লেখা “বাইরে এসো, বাইরে বিশাল জগত। যেখানে রয়েছে আনন্দ আর নতুন অভিজ্ঞতার শিহরন। কেউ-ই চাইবে না তুমি মিস করো এই সুন্দর পৃথিবীর চ্যালেঞ্জ। তাই বেরিয়ে পড়ো, সাড়া দাও জীবনের আহ্বানে”।
জেন্ডার অসংবেদনশীলতাঃ
বিজ্ঞাপনটি একটি ট্যালকম পাউডারের। ট্যালকম পাউডার হল এমন একটি প্রসাধনী যা সাধারণত মানুষ গরমের ফলে সৃষ্ট ঘামাচি বা এই ধরণের সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে ব্যবহার করে। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল জেন্ডারের মানুষ এই প্রসাধনী ব্যবহার করে থাকে। তাই এই পণ্যের বিজ্ঞাপনে শুধু মেয়ে মডেল নেয়া একটি বড় ধরণের জেন্ডার অসংবেদনশীলতা। তাছাড়া ট্যালকম পাউডারের সাথে মেয়েদের পা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকার কোন কারণ নেই।
মডেলদেরকে বিজ্ঞাপনে পা উঁচু করে দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে শুধু পুরুষ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য। এই বিজ্ঞাপনটি চরমমাত্রায় জেন্ডার অসংবেদনশীল।
কেস স্টাডি ৩
পণ্যের নামঃ প্রান দই
বিবরণঃ একজন মডেল দই খাচ্ছেন।
জেন্ডার অসংবেদনশীলতাঃ
বিজ্ঞাপনটিতে একজন নারী মডেলের দই খাওয়ার দৃশ্য হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে না খেয়ে অদ্ভুত যৌন উত্তেজক ভঙ্গিতে তিনি দই খাচ্ছেন। বামপাশে উপরে লেখা রয়েছে “আসল খাবার খেয়েছেন তো?”
এখানে আসল খাবার বলতে কি বোঝানো হচ্ছে? এই কথার পরিবর্তে তারা লিখতে পারতেন, “আসল দই খেয়েছেন তো?”। এই কথাটি ব্যবহার করলে দ্বৈত অর্থ তৈরি হতো না। কিন্তু তারা তা করেননি। আর দইয়ের বিজ্ঞাপনে কেন শুধু নারী মডেল? পুরুষরা কি দই খায় না? তাহলে এই বিজ্ঞাপনে কেন পুরুষ মডেল নেয়া হলো না?
এই বিজ্ঞাপনে নারীকে অস্বাভাবিক ও যৌন উত্তেজক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা জেন্ডার অসংবেদনশীল।
কেস স্টাডি ৪
পণ্যের নামঃ বাংলা লিংক
বিবরণঃ কয়েকজন মডেল একটি সুইমিংপুলের পাশে দাড়িয়ে মজা করছে।
জেন্ডার অসংবেদনশীলতাঃ
বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে কয়েক জন মডেল সুইমিংপুলের পাশে দাড়িয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। আপাত দৃষ্টিতে তাদেরকে বন্ধু বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মেয়ে দুজনের মুখভঙ্গি ও দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখলে সহজেই বোঝা যায় এখানে তাদেরকে যৌন উত্তেজক ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে আরেকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তা হল মেয়ে দুজনকে এমন স্থানে দাড় করানো হয়েছে যেখানে সবার আগে চোখ যায়। কলরেট কমার কারণে তারা খুশি এটা বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু পেছনের মেয়েটার ক্লিভেজ কেন দেখা যাচ্ছে? এই বিজ্ঞাপনে তার ক্লিভেজ দেখানো কি খুব দরকার ছিল? আবার যে তিনটি ছেলে মডেল দাড়িয়ে রয়েছে তাদের করো পুরো শরীর দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে মেয়ে মডেল দুজনকে এমন ভাবে দাড় করানো হয়েছে যাতে করে তাদের পুরো শরীর দেখা যায়। এবং তাদেরকে ক্যামেরার ফোকাস পয়েন্টে রাখা হয়েছে।
এই বিজ্ঞাপনে নারী মডেলকে ব্যবহার করা হয়েছে পুরুষের মনোরঞ্জন করার উপাদান হিসেবে। মডেলদের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, অবস্থান ও ক্যামেরা এঙ্গেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতাকে। এটি চরমভাবে লিঙ্গ অসংবেদনশীল একটি বিজ্ঞাপন।
কেস স্টাডি ৫
পণ্যের নামঃ ব্লুপ আইসক্রিম
বিবরণঃ দুজন নারী মডেল অদ্ভুত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে রয়েছেন।
জেন্ডার অসংবেদনশীলতাঃ
এই বিজ্ঞাপনের জেন্ডার অসংবেদনশীলতা এতই প্রকটভাবে দৃশ্যমান যে এটা বোঝার জন্য জেন্ডার বিষয়ে লেখাপড়া করার প্রয়োজন নেই। যে কোন স্বাভাবিক মানুষ এই বিজ্ঞাপন দেখলে হোঁচট খাবে। আইস ক্রিমের এই বিজ্ঞাপনে দুজন নারী মডেল অদ্ভুতভাবে দাড়িয়ে রয়েছেন। তাদের মাথার শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ধরণের আইসক্রিম। মডেলদের শরীরে কোন ব্লাউজ নেই, কিন্তু হাতের কব্জি থেকে কনুইয়ের উপর পর্যন্ত ঢাকা। যা খুবই দৃষ্টিকটু। এমনটা করা হয়েছে অডিয়েন্সকে আকৃষ্ট করার জন্য। তাদের মুখভঙ্গির মাধ্যমে যৌন উত্তেজক অবাচনিক বার্তা দেয়া হয়েছে। যা নিঃসন্দেহে চরম মাত্রায় জেন্ডার অসংবেদনশীল।
বিজ্ঞাপনে এই ধরণের পোশাককে ঈদ ফ্যাশন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি বেণিয়া প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের প্রচার করার জন্য বিভিন্ন উৎসবে বিজ্ঞাপন প্রচার করতেই পারে, তবে কেন নারীকে হেয় করে। এই বিজ্ঞাপনে নারীকে দেখা হয়েছে ভোগবাদী পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে। বিজ্ঞাপনটির পরতে পরতে পুরুষতান্ত্রিকতার ছাপ স্পষ্ট।
কেস স্টাডি ৬
পণ্যের নামঃ ডিপ্লোমা গুড়ো দুধ
বিবরণঃ দুই জন মডেল চামচ চেটে খাচ্ছেন।
জেন্ডার অসংবেসনশীলতাঃ
বিজ্ঞাপনটিতে দেখা যাচ্ছে দুজন ডাকাত ডাকাতি করতে এসে ডাকাতি না করে ডিপ্লোমা দুধ খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। তারা ডিপ্লোমা দুধের স্বাদে মজে গিয়ে ডাকাতি করার কথা ভুলে গেছে। সাধারণভাবে দেখলে বিজ্ঞাপনটিকে জেন্ডার সংবেদনশীল বলে মনে হয়। কিন্তু একটু ভাবলেই জেন্ডারের stereotype ধারণা আমাদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। এখানে দুজন ডাকাতকে দেখানো হয়েছে এবং দুজন মডেলই পুরুষ। এমন কেন? নারীরা কি ডাকাত হতে পারে না? তবে কেন নারী মডেলকে এখানে নেয়া হল না? এর কারণ আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবধরণের খারাপ ও পেশীশক্তির কাজে পুরুষদের দেখতে পছন্দ করে।
এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা একটি বিষয় বুঝতে পারি যে জেন্ডার অসংবেসদনশীলতার শিকার শুধু নারীরা হয় না অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও হয়। অর্থাৎ জেন্ডার অসংবেদনশীলতা নারীদের সমস্যা না, এটি একটি সামাজিক সমস্যা। যদিও অনেকে জেন্ডার অসংবেদনশীলতাকে নারীর সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন।
No comments:
Post a Comment