ইথাকা কবিতার আলোকে উন্নয়ন

উন্নয়ন কি? উন্নয়ন বলতে কি বোঝায়? কিভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা চলছে বহু বছর ধরে। বিভিন্ন ঘরনার তাত্ত্বিকরা উন্নয়নকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করে থাকেন। আগে উন্নয়ন শব্দটি অর্থনীতি বা সমাজের ক্ষেত্রে ব্যবহারের চেয়ে জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহৃত হত। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে জন মেনার্ড কেইনস অর্থনীতি ও সমাজের ক্ষেত্রে উন্নয়ন শব্দটি প্রয়োগ করেন।

উন্নয়নের ধারনাকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়। এগুলো হলোঃ 

১) প্রথম যুগঃ ১৯৬০’র দশককে উন্নয়নের প্রথম যুগ বলে ধরা হয়। এসময় উন্নয়নকে পরিমাপ করা হত মোট জাতীয় উৎপাদন দ্বারা। উন্নয়নের প্রথম যুগে মোট জাতীয় উৎপাদনের বৃদ্ধিকে উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হত এবং যে দেশের জাতীয় উৎপাদন যত বেশি সে দেশকে তত উন্নত বলে মনে করা হত। পরবর্তীকালে এই ধারণা ব্যাপক সমালোচিত হয়েছে। (What is development?, 2007)


২) দ্বিতীয় যুগঃ উন্নয়নের দ্বিতীয় যুগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৭০’র দশককে। এই যুগে এসে উন্নয়ন বলতে মানুষের জীবনযাত্রার মানের ইতিবাচক পরিবর্তনকে বোঝায়। দ্বিতীয় যুগে এসে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বদলে উন্নয়নের মাপকাঠি হয়ে দাড়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মান। এই যুগে উন্নয়ন বলতে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিবাচক পরিবর্তনকে বোঝাত। (What is development?, 2007)

৩) তৃতীয় যুগঃ উন্নয়নের তৃতীয় যুগের শুরু হয় ১৯৮০’র দশেকে। এই সময় উদ্ভব ঘটে টেকসই উন্নয়ন ধারণার। নব্য উদারবাদ প্রভাবিত এই ধারণা তৃতীয় যুগে এসে উন্নয়নের ক্ষেত্রে কর্তৃত্বপূর্ণ (Dominant) প্যারাডাইম হিসেবে সামনে চলে আসে। টেকসই উন্নয়নে পবিবেশের উপর জোর দেয়া হয়। (What is development?, 2007)



A Poem on Development এবং Ithaka কবিতার আলোকে উন্নয়নঃ

উন্নয়ন বলতে কি বোঝায়? এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেয়া খুব কঠিন কাজ। আমাদের চার পাশে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ফলে আমরা খুব সহজে সারা বিশ্বে যোগাযোগ করতে পারছি। মার্শাল ম্যাকলুহানের ভাষায়, পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি বিশ্বগ্রামে। 

সাদা চোখে দেখলে মনে হয় এগুলোই বুঝি উন্নয়ন। কিন্তু শুধু অবকাঠামোগত অগ্রগতি একটি সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন নির্দেশ করে না। যদিও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত অগ্রগতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে রয়েছে। প্রকৃত উন্নয়ন তখন ঘটে যখন সমাজের মানুষের মননে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে, তাদের মাঝে মানবিকতা ও শুভ বোধের উদয় ঘটে এবং সমাজে বৈষম্য হ্রাস পায়। 

A Poem on Development এ বলা হয়েছে রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নলকূপ খনন বা কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলেই উন্নয়ন হবে না। আরও বলা হয়েছে উৎপাদনশীল খাতের বিকাশ মানেই উন্নয়ন নয়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেই সমাজে সমতা আসে না, দুর্নীতি, অবিচার হ্রাস পায় না।

প্রকৃত উন্নয়ন বলতে শুধু সামাজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বোঝায় না। অবকাঠামোগত উন্নয়নের সুফল সমাজ পাবে না যদি মানুষের আত্মিক উন্নয়ন না ঘটে। সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন মানুষের আত্মিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে “নতুন ধরণের মানুষ” সৃষ্টি করতে হবে যারা সকল ধরণের অন্যায়, অবিচার, শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। উপনিবেশিক ফ্রান্সে জন্ম নেয়া সমাজতাত্ত্বিক ও দার্শনিক Frantz Fanon মনে করেন প্রকৃত আত্মিক উন্নয়নের জন্য “Decolonization of mind” প্রয়োজন। “Decolonization of mind” এর মাধ্যমে ঘুনে ধরা, বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক ধ্যান ধারণাকে বতিল করতে হবে। ধরা যাক, একটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে, কিন্তু যদি ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতিগ্রস্থ লোক দায়িত্বে থাকে তাহলে কি জনগণ কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে? অবশ্যই পাবে না, কারণ দুর্নীতিগ্রস্থ লোকের কাছ থেকে ভাল কাজ আশা করা যায় না। সেকারণে অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে সঠিক ফলাফল পাওয়ার জন্য আমাদের প্রয়োজন আত্মিক উন্নয়ন। এই দুই ধরণের উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা যে উন্নয়ন পাব তা হবে টেকসই।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হলেও আত্মিক উন্নয়নের জন্য সময়ের প্রয়োজন। দ্রুত সময়ের মধ্যে মানুষের মননে পরিবর্তন আনা যায় না। মানসিকতায় পরিবর্তন আনার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। 

“Ithaka” কবিতায় বলা হয়েছে ইথাকাতে যাওয়ার রাস্তা মসৃণ না। যাওয়ার পথে পদে পদে বাঁধার সম্মুখীন হতে হবে। মোকাবেলা করতে হবে বিভিন্ন অশুভ শক্তিকে। তবে এইসব অশুভ শক্তি কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না, যদি লক্ষ্য ও বিশ্বাস অটুট থাকে। কবি লিখছেনঃ 

As long as you keep your thoughts raised high,
as long as a rare excitement
stirs your spirit and your body.
Laistrygonians and Cyclops, 
wild Poseidon—you won’t encounter them
unless you bring them along inside your soul, 
unless your soul sets them up in front of you.

কবির মতে লক্ষ্য যদি উচ্চ হয়, তাহলে পথের কোন প্রতিকূলতাই সামনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে একমাত্র বাঁধা হল ব্যক্তি নিজে। ব্যক্তি যদি নিজের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিধায় থাকে, কিভাবে তার গন্তব্যে পৌঁছাবে সেই পরিকল্পনা না থাকে তাহলে সে অশুচ শক্তির কাছে পরাজিত হবে। অন্যদিকে যদি তার লক্ষ্যে অটুট থেকে সঠিকভাবে কাজ করে যায় তবে তার জয় সুনিশ্চিত। এই প্রসঙ্গে ইরানি কবি Hafiz এর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, “You yourself are your own obstacle. Rise above yourself.”

উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই ধারণা প্রযোজ্য। আত্মিক উন্নয়ন করতে গেলে সমাজের প্রচলিত অনেক ভ্রান্ত ও নিপীড়নমূলক ধ্যান ধারণাকে বাতিল করতে হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে নাকচ করে নতুন সমাজ কাঠামো গড়ে তুলতে হয়। নতুন সমাজ কাঠামো তৈরি করা সহজ কাজ না। বিদ্যমান কাঠামোতে যারা সুবিধাভোগী তারা নতুন সমাজ সৃষ্টির পথে বাঁধা প্রদান করবে এটাই স্বাভাবিক। লক্ষ্য ও আদর্শ (কি করতে চাই ও কিভাবে করব) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকলে এই বাঁধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে না। অতীতে দেখা গেছে সমাজ কাঠামো ভাঙতে গিয়ে অনেক আন্দোলন, সংগ্রাম যথেষ্ট আশা সৃষ্টি করার পরও ব্যর্থ হয়েছে লক্ষ্য ও আদর্শ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে। আবার লক্ষ্য ও আদর্শ সঠিক থাকা সত্ত্বেও উন্নয়ন প্রক্রিয়া (বা আন্দোলন) ব্যর্থ হতে পারে বন্ধু বা শত্রু চিনতে ভুল করলে। এপ্রসঙ্গে নক্সাল বিপ্লবের কথা বলা যেতে পারে, ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেও আন্দোলনটি সফলতা পায়নি। 

G. Belkin তার কবিতায় বলেছেন উন্নয়ন বলতে বোঝায় সমাজের মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকে। উৎপাদনশীল খাতের সম্প্রসারণ ঘটলেই প্রকৃত উন্নয়ন হয় না। উৎপাদনশীল খাতের সম্প্রসারণের ফলে যদি স্থানীয় মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি না পায়, তাহলে সেটা কোন উন্নয়ন না। 

ভারতীয় অর্থনীতিবিদ Amartya Sen একই ধরণের কথা বলেছেন। তার মতে কোন একটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সেখানকার জনগনের জন্য দুটি বিষয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এগুলো হল, ১) স্বত্বাধিকার ২) সক্ষমতা। 

স্বত্বাধিকার বলতে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন মৌলিক উপকরণের উপর আইনগত অধিকারকে বোঝায়। অন্যদিকে সক্ষমতা হল ওই উপকরণগুলো ভোগ বা ক্রয় করার ক্ষমতা। 

A Poem on Development কবিতায় G. Belkin যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলেছেন সেগুলো যদি মানুষের স্বত্বাধিকার ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে তবে তাকে আমরা প্রকৃত উন্নয়ন বলতে পারি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের কার্যক্রম যদি সাধারণ মানুষের সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে তাদের চাহিদা অনুসারে গ্রহন করা হয় তাহলে সেই অবকাঠামোগত উন্নয়ন মানুষের স্বত্বাধিকার ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে Amartya Sen মনে করেন (চৌধুরী, ১৯৯৯ )।

উন্নয়ন কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত স্থানীয় মানুষের বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। স্থানীয় বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় না নিলে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এপ্রসঙ্গে Arturo Escobar বলেছেন, ‘Development projects that do not take into account the historical development of communities they are supposed to develop end up destroying their culture and identity’.(Escobar, 1996)

A Poem on Development কবিতার শেষে G. Belkin লিখেছেন, 

The tractor could represent many lies told
and as truths withheld.
To judge how much development a thing represents,
We have to look at
the people who bought the thing about, and how and why.

উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারকে সাদা চোখে দেখলে মনে হয় উন্নয়ন। কিন্তু শুধু আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেই কি প্রকৃত উন্নয়ন হয়? প্রযুক্তি ব্যবহার যেমন উন্নয়নের উপায় হতে পারে ঠিক তেমনিভাবে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ আরও পিছিয়ে পরতে পারে। প্রযুক্তি যেমন মানবিকতা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইতিবাচক পরিবর্তনের উপায় হতে পারে তেমনি হতে পারে শোষণের হাতিয়ার। আধুনিক যন্ত্রপাতি উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখবে সেটা নির্ভর করবে কে সেই প্রযুক্তি আমদানি করেছে এবং কিভাবে ব্যবহার করছে তার উপর। সমাজের এলিটরা প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ করলে সেখান থেকে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করা যায় না। আমাদের দেশের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমের কথা এপ্রসঙ্গে বলা যায়। বিভিন্ন বেসরকারি গণমাধ্যমের মতো রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম গুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি হয়েছে, তবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে শাসক শ্রেণির মতাদর্শ প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে। সেখানে শাসক শ্রেণি ছাড়া অন্য কারো সংবাদ প্রচার করা হয় না। অর্থাৎ ওই আধুনিক প্রযুক্তি প্রকৃতপক্ষে আধুনিক নয়। 

তবে যখন আধুনিক প্রযুক্তি সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে তাদের কণ্ঠস্বর প্রকাশের উপায় হিসেবে সেখানে ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা যায়। ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যেখানে সাধারণ মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। মূলত আধুনিক প্রযুক্তির সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যের উপর। 

C. P. Cavafy তার “Ithaka” কবিতায় লিখেছেন, 

Keep Ithaka always in your mind. 
Arriving there is what you're destined for. 
But do not hurry the journey at all. 
Better if it lasts for years, 
so that you're old by the time you reach the island, 
wealthy with all you have gained on the way, 
not expecting Ithaka to make you rich.

কবির মতে ইথাকাতে যাওয়ার পথে তাড়াহুড়ো করার প্রয়োজন নেই। যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় সেটা হচ্ছে ইথাকার কথা মনে রাখা, অর্থাৎ লক্ষ্য অবিচল থাকা। কবি মনে করেন ইথাকাকে যাওয়ার জন্য যত বেশি সময় লাগবে ততই ভাল। কারণ এতে করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা যাবে। এই যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা দিয়েই পরবর্তী জীবন পার করে দেয়া যাবে। ইথাকাতে পৌঁছানোর পর আর কোন প্রত্যাশা করতে কবি নিরুৎসাহিত করেছেন। তার মতে ইথাকার যাত্রা পথে যা পাওয়া গেছে তা যথেষ্ট। 

এই রকম ধারণা আমরা Paulo Coelho রচিত The Alchemist বইতেও পাই। সেখানে লেখক একজন রাখালের ভ্রমন বর্ণনা করেছেন। লেখক তার লেখায় খুব স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন কিভাবে যাত্রার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা একজন মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। যাত্রা পথে লক্ষ্যে স্থির থাকা ও প্রলোভনে পরে যাত্রা বন্ধ না করাই হল সাফল্যের চাবিকাঠি। 

উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই কথা সমভাবে প্রযোজ্য। উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। হঠাৎ করে উন্নয়ন হয়, সব কিছুর জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই প্রস্তুতি একটু অন্যরকম, সমাজের উলম্ব (Vartical/ Top-Down) কাঠামো বজায় রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব না। উন্নয়নের জন্য উলম্ব সমাজ কাঠামো ভেঙে আনুভূমিক (Horizontal) সমাজ তৈরি করতে হবে। সমাজ কাঠামো ভাঙা সহজ কাজ না। উন্নয়নের নতুন সমাজ সৃষ্টি করার পথে বাঁধা আসবে। বর্তমান কাঠামোতে যারা সুবিধাভোগী ও শাসক তারা চাইবে না সমতা ভিত্তিক সমাজ গঠন করতে। সেজন্য সমাজের অধিকাংশ মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে এই উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে করে সুবিধাভোগী, শাসক শ্রেণির বাঁধা প্রতিরোধ করে উন্নয়ন করা যায়। কবি যেমন বলেছেন ইথাকা যাত্রা দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা নেই আরও বরং ভাল। তেমনি মানুষকে সচেতন করার এই প্রক্রিয়াও যত দীর্ঘায়িত হবে ততই ভাল, কারণ এর ফলে বেশি সংখ্যক মানুষকে সচেতন করা যাবে। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দীর্ঘায়িত হলে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে। ইংরেজিতে একটি কথা আছে “A stretch in time saves nine” 

“Ithaka” কবিতার শেষের স্তবকে কবি বলেছেন, 

And if you find her poor, Ithaka won't have fooled you. 
Wise as you will have become, so full of experience, 
you will have understood by then what these Ithakas mean.

কবি যাত্রীকে সতর্ক করে দিয়েছেন ইথাকা সম্পর্কে। তিনি যাত্রীকে হতাশ হতে না করেছেন যদি সে পৌঁছে দেখে ইথাকা সম্পদশালী কোন স্থান নয়। ইথকাকে গরীব পেলে যেন যাত্রী না ভাবে ইথাকা তাকে বোকা বানিয়েছে। যাত্রা পথে সে (যাত্রী) যে মহামূল্যবান অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করেছেন সেই জ্ঞানের আলোকে তিনি বুঝতে পারবেন ইথাকার আসল পরিচয়। 

উন্নয়নের ধারনাটাও এমন। অনেকে মনে করে থাকেন উন্নয়ন মানে টাকা-পয়সা, অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি কিন্তু আসলে কি তাই? মোটেও না। উন্নয়ন হল মানুষের আত্মিক উন্নয়ন। অনেক টাকা-পয়সা, অর্থকড়ি না থাকলেও উন্নয়ন সম্ভব। প্রকৃত উন্নয়ন হলো মনের উন্নয়ন, চিন্তার উন্নয়ন, মানবিকতার বিকাশ। যাদের টাকা-পয়সা কম তারা অনুন্নত (ইতর) না বরং অনুন্নত (ইতর) হল তারা যাদের মন খাঁচায় আটকানো, যারা মুক্ত ভাবে ভাবতে পারে না। William Wordsworth এর ভাষায় বললে উন্নয়ন হল “Plain living and high thinking”.

কবিতা দুটির আলোকে বলা যায় উন্নয়ন বলতে শুধু দৃশ্যমান উন্নয়নকে বোঝায় না। দৃশ্যমান অবকাঠামোগত অগ্রগতি আমাদেরকে সুখী, সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যদি আত্মিক উন্নয়ন না ঘটে। এবং আত্মিক উন্নয়ন একদিনে ঘটবে না, আত্মিক উন্নয়নের জন্য কিছুটা প্রয়োজন হয়। উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, যা একদিনে পাওয়া যায় না এবং সহজে পাওয়া যায় না। প্রকৃত উন্নয়ন দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। 


তথ্যসূত্রঃ 

What is development? (2007, January 02). Retrieved April 16, 2017, from http://trelborja.blogspot.com/2007/01/part-2-of-unit-1-unit-2-in-tro-to.html

Cavafy, C. (1992). Retrieved April 29, 2017, from http://www.cavafy.com/poems/content.asp?cat=1&id=74

Coelho, P. (1992). The Alchemist. Retrieved April 30, 2017, from http://rgi.edu.in/rgi_pdf/Paulo_Coelho_-_The_Alchemist(1).pdf

Escobar, A. (1996). Liberation ecologies: Environment, development, social movements. London: Routledge Kegan Paul.

Fanon, F. (n.d.). Retrieved April 29, 2017, from http://www.iep.utm.edu/fanon/

Hafiz. (n.d.). Retrieved April 29, 2017, from http://www.goodreads.com/quotes/7455074-you-yourself-are-your-own-obstacle-rise-above-yourself

চৌধুরী, ক. (Ed.). (১৯৯৯ )। অর্থনীতির মুক্তি। কলকাতা: দেজ পাবলিশিং। 



1 comment:

  1. 1xbet korean - Legalbet.co.kr
    1xbet korean sportsbook review. All betting terms explained in detail; Asian odds 1xbet explained; European odds explained; Asian tips; Asia

    ReplyDelete