আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্ব
ম্যাককম্বস ও শ ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের প্রায়োগিক পরীক্ষা চালান। আর এই পরীক্ষার মাধ্যমে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ তত্ত্বের একটি সুদৃঢ় কাঠামো দাড়িয়ে যায়।
এই তত্ত্বের মূল কথা হলো পাঠক-দর্শক-শ্রোতা (অডিয়েন্স) গণমাধ্যমে কোনো ইস্যুর প্রচার অনুযায়ী তাদের নিজেদের অনুধাবন সাজিয়ে নেয়। অর্থাৎ কোনো ইস্যু গণমাধ্যমে প্রাধান্য পেলে জনগনের চিন্তা ও আলোচনায় এর প্রাধান্য থাকবে বলে মনে করা যেতে পারে। এ তত্ত্বে আরও বলা হয়, মানুষ কোন বিষয়ে চিন্তা করবে, তা ঠিক করে দেয় গণমাধ্যম কিন্তু কি চিন্তা করবে তা বলে দেয় না।
আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ধাপঃ
গণমাধ্যমের আলোচ্যসূচি নির্ধারণের কাজটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে গণমাধ্যম কোনো ইস্যু বা বিষয় বেছে নেয়। জনগনের কি নিয়ে ভাবা উচিত, সে সম্পর্কে চিন্তিত করে তুলতে দ্বিতীয় পর্যায়ে গণমাধ্যম ওই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে প্রচার করে। এ পর্যায়ে গণমাধ্যম নিয়মিত ওই বিষয়ের উপর খবর বা মতামত প্রচার করতে থাকে। এভাবে গণমাধ্যমের নির্ধারণ করা আলোচ্যসূচি ধীরে ধীরে জনগনের আলোচ্যসূচিতে পরিণত হয়। ফলে গণমাধ্যমের আলোচ্যসূচি জনগনের কাছেও আলোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে।
আলোচ্যসূচি নির্ধারণ কৌশলঃ
আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কিছু কৌশল অবলম্বন করে থাকে। যথাঃ
দ্বার রক্ষণঃ গণমাধ্যমে দ্বার রক্ষণ বলতে আধেয় নিয়ন্ত্রনের প্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রতিদিন আমাদের চারপাশে অনেক ঘটনা ঘটে। কিন্তু গণমাধ্যমে সব সংবাদ আসে না। অসংখ্য ঘটনার মধ্য থেকে নির্বাচিত কিছু সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যেমনঃ দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়াদিগন্তে জামায়েতে ইসলামীর সাংগঠনিক টুকিটাকি সংবাদও প্রচারিত হয়। আবার দৈনিক প্রথমআলো, দৈনিক সংবাদ, একাত্তর টেলিভিশনে জামায়েতে ইসলামীর সাংগঠনিক টুকিটাকি সংবাদ আসে না। আবার বিটিভি’তে সরকারদলীয় সংবাদে ঠাঁসা। বিরোধীদলের সংবাদের ঠাই সেখানে হয় না। এগুলো হয় দ্বার রক্ষনের কারণে। দ্বার রক্ষনের মাধ্যমে গণমাধ্যম সংবাদ প্রবাহ নিয়ন্ত্রন করে। তবে সব সময় যে দ্বার রক্ষনের কাজটি গণমাধ্যম নিজে থেকে করে না নয় অনেক সময় বাহ্যিক উৎস থেকে চাপ আসার কারণে দ্বার রক্ষন করতে হয়।
মুখ্যকরণঃ গণমাধ্যমে কিছু সংবাদ বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়। আর কিছু সংবাদ খুব সাদামাটাভাবে উপস্থাপিত হয়। অসংখ্য সংবাদের ভিড়ে ভিন্ন ভিন্ন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে গণমাধ্যম কোনো ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে, আর কোনো কোনো ইস্যুকে কম গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করে। এভাবে গণমাধ্যম অডিয়েন্সকে বলে দেয়, কোন বিষয়টা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদপত্রগুলো ব্যানার হেডলাইন বা শীর্ষ সংবাদ, বক্স, লাল কালি বা মোটা হরফের ব্যবহার ইত্যাদির মাধ্যমে কোন সংবাদ বা ইস্যুকে পাঠকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। অপরদিকে রেডিও টেলিভিশনে দিনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, সংবাদের প্রথমদিকে, একাধিকবার প্রচার করে, অধিক সময় বরাদ্দ করে দর্শক শ্রোতার কাছে কোন খবর বা ইস্যুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের এ ধরনের কার্যাবলী হলো মুখ্যকরণ। আলোচ্যসূচি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুখ্যকরণ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ।
কাঠামোকরণঃ একটি ঘটনাকে একেকটি গণমাধ্যম একেকভাবে উপস্থাপন করে। কোনো ঘটনা বা ইস্যুকে কোনো বিশেষ আঙ্গিকে উপস্থাপন করার কৌশলকে কাঠামোকরণ বলে। যোগাযোগ গবেষক গিটলিন কাঠামোকরণ সম্পর্কে বলেছেন, “Frames are principals of selection, emphasis and presentation composed of little tact theories about what exists what happens, and what matters”.
অর্থাৎ কাঠামোকরণ হলো, কোন বিষয় বা ইস্যুকে নিজস্ব আঙ্গিকে উপস্থপন করার কৌশল। যেমনঃ ২০১১ সালে আওয়ামীলীগ সরকারের গৃহীত নারী উন্নয়ন নীতিমালাকে মৌলবাদী ঘরনার গণমাধ্যমে ‘ইসলাম বিরোধী’ বলে উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে প্রগতিশীল গণমাধ্যমে তা নারীর সম-অধিকাররের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
হায়দার, শা. এবং সামিন, সা. (২০১৪)। গণযোগাযোগ তত্ত্ব ও প্রয়োগ। ঢাকা: বাংলাদেশ প্রেস ইনন্সিটিউট।
No comments:
Post a Comment