“ভক্স পপুলাই ভক্স ডাই”
“জনগণের কণ্ঠস্বরই ঈশ্বরের কন্ঠস্বর”
আধুনিক গণতান্ত্রিক বিশ্বে গণমাধ্যমকে বিবেচনা করা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে। আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ, রাষ্ট্রের এই তিনটি স্তম্ভের বিভিন্ন কার্যক্রম জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে সরকারের জবাবদিহিতার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারণ করে গণমাধ্যম। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। যে দর্পণে ফুটে ওঠে জনগণের চাওয়া-পাওয়া, মতামত, আশা-আকাক্ষা ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা ও সেসব সমস্যা সমাধানের পথ। বস্তুত গণমাধ্যমের ভেতর দিয়েই গণতান্ত্রিক সমাজে প্রকাশ পায় জনগণের কন্ঠস্বর।
সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, দুর্নীতি, অনিয়ম ইত্যাদি গণমাধ্যম কর্মীরা জনগণের সামনে তুলে ধরেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিদিনের সাদামাটা সাংবাদিকতা থেকে আলাদা। এধরণের সাংবাদিকতার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ প্রস্তুতি ও যোগ্যতাসম্পন্ন সাংবাদিক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাঃ “শব্দগত দিক থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ইংরেজি হলো ‘Investigative Reporting’। এই ‘Investigative’ শব্দটি এসেছে ইতালীয় শব্দ ‘Investigare’ থেকে যার মূল হলো ল্যাটিন শব্দ ‘Vestigium’। এই ‘Vestigium’ শব্দটির অর্থ হলো পদচিহ্ন বা গতিধারা। আর ‘Reporting’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Reportare’ থেকে যার অর্থ হলো কোন স্থান থেকে কোন কিছু বের করে আনা। অর্থাৎ ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে অনুসন্ধানী রিপোর্টিং বলতে কোন গতিধারা বা পদচিহ্ন অনুসরণ করে কোন স্থান থেকে কোন কিছু উদঘাটন করে আনাই অনুসন্ধানী রিপোর্টিং। সাধারণ দৃষ্টিতে যে তথ্যের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না তাকে বের করে আনাই এ ধরনের প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস করে দুনিয়া জুড়ে খ্যাতি পাওয়া সাংবাদিক কার্ল বার্নস্টাইনের মতে সব ভাল রিপোর্টিংই অনুসন্ধানী রিপোর্টিং”।
জনস্বার্থ বিষয়ক কোনো অজানা কিংবা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা ঘটনা বা অবস্থাকে ব্যাপক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জনগণের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে অনুসন্ধানী সংবাদ হয়। সাংবাদিকতার সর্বাপেক্ষা চ্যালেজ্ঞিং ও জনপ্রিয় ধারা হলো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা। সমাজের অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি সামাজিক সমস্যার স্বরূপ উন্মোচন করা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা যেমন গ্ল্যামারাস ঠিক তেমনি চ্যালেজ্ঞিং। একটি ভাল অনুসন্ধানী সংবাদ একজন সাংবাদিকের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দতে পারে। তবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মোটেও সহজ নয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর প্ররিশ্রম। শুধু কঠোর প্ররিশ্রম করলেই একজন সাংবাদিকের পক্ষে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা সম্ভব হয় না। এর সাথে কিছু অনুসাঙ্গিক বিষয় সম্পৃক্ত রয়েছে যেমনঃ মিডিয়া হাউজের পলিসি, আর্থিক সক্ষমতা ইত্যাদি।
সাংবাদিক তার হাউজের পলিসির বাইরে গিয়ে কোন রিপোর্ট প্রকাশ করতে পারবে না। আবার অনেক সময় এমন হয় যে হাউজের পলিসির সাথে সাংঘর্ষিক না হওয়া সত্ত্বেও অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা সম্ভব হয় না। রাতারাতি অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি করি যায় না। অনুসন্ধানী সংবাদের জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার গ্রহণ ইত্যাদি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হয়। যে কারণে ছোট মিডিয়া হাউজগুলোতে অনুসন্ধানী সংবাদ অনেক কম হয়। অনুসন্ধানী রিপোর্টিং এর সাথে মিডিয়া হাউজের আর্থিক সক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে। যদিও অনেক টাকা খরচ করলেই ভালো অনুসন্ধানী রিপোর্ট পাওয়া যাবে এমন কোন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
Thanks for writting about investigative journalism.
ReplyDelete